পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হে অরণ্য কথা কও ՅՀՑ সরল ও সহজ আনন্দের মধ্যে দিয়েই এখানে আপনাতে আপনি সম্পূর্ণ, তার উদ্দেশে মনের কৃতজ্ঞতাই তার পূজার অর্ঘ্য। এই স্থানটির নাম দিলুম বনশ্ৰী। 屬 জেরাইকেল থেকে আট মাইল এ স্থান, সোজা রাস্তা, চলেচে জেরাইকেল স্টেশন । আবার চলেচি, পথে জেরাইকেল থেকে পাচ মাইলে পড়লো সামটা নালা। এমন চমৎকার নদীগুলির নাম এদেশে মোটেই সুন্দর নয়—বড় কর্কশ নাম দেয় হো ভাষায় । আমাদের বাংলা দেশের অনেক বাজে নদীরও নাম এদের চেয়ে কত ভাল। এই সামটা নালা পার হয়েই এক রাস্তার মোড়—এক রাস্ত গিয়েচে থলকোবাদ তিরিলপোসি হয়ে । সামূট নালা বেয়ে কিছুদূর এসে গাছপালার প্রকৃতি যেন বাংলা দেশের মত। ঘন নিবিড় বনানী, বনকলা গাছ, ঝোপঝাপ লতাপাত, ঠিক যেন বাংলা দেশ । আমার ভিটেতে ব্যারাকপুরে যে গাছ আছে, যার চটিজুতোর মত ফল হয়, এখানে ছোটনাগপুর ইনডাস্ট্রিস থেকে যেখানে গাছ কেটেচে সেখানে অবিকল এমনি গাছপালা । শালগাছ নেই, বাংলার মত আরণ্য গাছ। দশ মাইল দূরে একটি অতি স্বন্দর উচ্চ স্থান থেকে ঠিক যেন হিমালয়ের দৃশু—সামনে সংকীর্ণ উপত্যকায় সামটা সাপের মত কুণ্ডলী নিয়ে বেঁধে কুণ্ডলীর বেষ্টনীর মধ্যে সবুজ একটি দ্বীপ স্বষ্টি করেচে–সামনে স্তরে স্তরে পাহাড় উঠেচে, তার ওপর দিয়ে রাস্তা একে বেঁকে চলেচে—দূরে একটি কুটির দেখা যাচ্চে উপত্যকার ওপরে সবুজ বনানীর মধ্যে ডুবে আছে। শুনলাম নিকটেই কোথায় বনের মধ্যে একটি জলপ্রপাত ও একটি গুহা আছে। “In the mountain fastnesses of Hazaribag” stood Gio Go to owl on পড়লে । সে পার্বত্য দৃষ্ঠ দেখবার বাসনা ১৯২৬ সাল থেকেই আছে, তহশিলদারের ভাইয়ের মুখে সাতনামা পাহাড়ের বর্ণনা শুনে যা দেখবার বাসনা জেগেছিল। ভগবানের স্মৃষ্টি দেখে বেড়াবে এই তো চাই। তারপর আমার মুক্তি হোক না হোক, আমি স্বর্গে যাই না ধাই—এসব ভাবনা আমার নেই। আমি না থাকলেই বা কি ? সেই অপূৰ্ব্ব শিল্পী যিনি এই দৃপ্ত স্বষ্টি করেচেন— যুগে যুগে তিনি থাকুন, তার স্বষ্টি চলুক এমনি স্বন্দর ভাবে কল্প থেকে কল্পাস্তরে, কত শত বিশ্বে, কত সহস্ৰ ব্ৰহ্মাণ্ডে, রূপে রূপে তিনি লোকলোকান্তর পূর্ণ করে মহাকালের পথহীন পথে অনন্তকাল একা চলুন, চঞ্চল বালকের মত সরল, চপল, আনন্দোজ্জল নৃত্যচ্ছন্দে হেসে গেয়ে । তিনি দীর্ঘজীবী হোন, চিরজীবী হোন। ফরেস্টার বুড়াউলি হে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বল্লে—ওই হেন্দেকুলি B. T, T. কোম্পানীর কুলীর তাবু। আমরা চলে এলুম পাহাড়ের পথ ঘুরে ঘুরে শুধু বনফুলের শোভা দেখতে দেখতে হেন্দেকুলি তাবুতে। এখানে বন বিভাগের একটা ছোট বাংলো আছে পথের পাশের উচু টিলাতে। নিচেকার জমিতে সামটা নালার ধারে অনেক কুলি মেয়ে-পুরুষ সন্ধ্যায় সারি সারি আগুন জেলে ভাত রাঁধছে। ওরা গাঙপুর স্টেট থেকে এসে আরাকাশি’ অর্থাৎ কাঠ চেরাইয়ের কুলীর কাজ করচে । সেই বনের মধ্যে সন্ধ্যার ঘন ছায়ায় জন কুড়ি ত্রিশ মেয়েপুরুষকে ভাত রোধে খেতে দেখে এমন ভালো লাগলো। ওপরে পাতা-ছাওয়া কুঁড়েঘরে বসে ওদের সঙ্গে গল্প করি আগুনের পাশে বলে। ওদের টিলার বাংলো থেকে সামনের