পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8३७ বিভূতি-রচনাবলী এ গল্প সাহসপ্রদ নয় এ কথা বলাই বাহুল্য। তবে বুনো হাতীর ও বাঘের গল্প সারেণ্ডার সর্বত্র এ ক'দিন শুনে শুনে খানিকটা অভ্যস্তও হয়ে গিয়েছি। বল্লুম–চলুন, দেখেই আসা যাক একবার । সেই কাটাওয়াল ফলগুলো কাটার মত কাপড়ে ও জামায় বিশ্ৰীভাবে বিধে যেতে লাগলো । এক জায়গায় সামান্য একটু ফাকা জায়গায় নরম মাটিতে কি দেখে ফরেস্টার হঠাৎ দাড়িয়ে গেল । বল্পে—বাঘের পায়ের দাগ । বড় বাঘ । —ঠিক তো ? —একেবারে ভুল নেই— o ফরেস্ট গার্ডও বল্লে—বড় বাঘের পায়ের দাগ । আর দেখুন, হুজুর, এগুলো বাইসনের— তা বলে তো ফেরা যায় না । বল্লুম। এক জায়গায় বন্য অশ্বগন্ধার পাতা তুলে দেখালে ফরেস্টার। আর একটা পরিষ্কার স্থান দেখিয়ে বল্লে—সম্বর এখানে রোদ পোয়ায় । সম্বরের পায়ের দাগ দেখুন কত— সত্যি, অনেক জানোয়ারের পায়ের দাগ বটে। সম্বর কিনা জানি না, গরু বা মহিধের পায়ের দাগের মত—তবে তার চেয়ে কিছু ছোট। বাইসনের পায়ের দাগ ঠিক মহিষের মত । ফাক জায়গা পার হতে পনেরো মিনিট সময় লাগলো। স্থানটি অতীব wild—তিনদিকে বনাবৃত পাহাড়ে গোল করে ঘিরেচে, জলাভূমির দিকে সংকীর্ণ ফাক। লোহা-চোয়ানো রাঙা জলের একটা ঝর্ণা ফাক মাঠ দিয়ে জলাভূমির দামদলের মধ্যে প্রবেশ করলো। রাস্ত থেকে অনেকদূর, প্রায় এক মাইলের বেশি। লোকালয়ের তো চিহ্নই নেই এসব অঞ্চলে। তার ওপর কাটাওয়ালা ফলের নীচু আগাছার জঙ্গলের মধ্যে বাইসন, হাতী ও বাঘের পায়ের দাগ। বেলা পড়ে এসেচে। জানোয়ারে তাড়া করলে পালাবার পথ নেই। কিন্তু গুহা না দেখে ফিরচি না । জঙ্গলের মধ্যে ঢুকলাম মাঠ পেরিয়ে—সামনে যে পাহাড় তারই নীচে গিয়ে দেখি প্রকাও গুহ, মুখের দিকে প্রায় মাটি থেকে নফুট উচু, লম্বায় পচাত্তর ফুট। গুহার মাঝখান দিয়ে পাহাড়ের ওপর দিক থেকে ক্ষুদ্র একটি লোহ-চোয়ানি রাঙা জলের ঝর্ণ বেরুচ্চে । ভেতরের দিকে উচ্চতা ক্রমশঃ কমে কমে এক-ফুট দেড়-ফুট দাড়িয়েচে, যেখান থেকে রাঙা ঝর্ণ বেরুচ্চে সেখানে। কি গভীর দৃপ্ত ! ঘন ছায়া বনে, ঘন অন্ধকার গুহার ভেতরের দিকে । গুহা ওখানে শেষ হল না, ভেতরের দিকে আরও আছে, দেখাই যায় না। গুহার সামনে ঠিক গুহার ছাদ ছুয়ে মোটা মোটা প্রাচীন ধাওড়া ও আমগাছ । আমগাছ ও ধাওড়া গাছে কাছির মত লতা উঠেচে জড়িয়ে জড়িয়ে-গুহার মধ্যে বসে শুধু দেখা যাচ্চে সামনের নিবিড় স্বপ্রাচীন জঙ্গল। অন্ধকার নামচে বনম্পতির ভিড়ে। রামায়ণে অরণ্যকাণ্ডের বনবর্ণনায় কবি বাল্মীকি প্রাচীন ভারতবর্ষের বনের যে চিত্র দিয়েচেন, সেই বৰ্ব্বর অরণ্য-প্রকৃতি এই গুহার সামমে, জাশে