পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8३४” বিভূতি-রচনাবলী লোকালয়ের মধ্যে হোত, রেল স্টেশন থেকে এক মাইল হোত, সাধুসন্নিলির ধুনি জালিয়ে বলে থাকতেন, দেওঘরের তপোবনের গুহার মত—তবে কি এমন অদ্ভুত লাগতো ? মোটেই না ।" ফরেস্টার বল্লে—চলিয়ে হুজুর । বহুৎ জানোয়ার রকৃত হয় হিয়া-চলিয়ে হিয়ালে— মিঃ সিনহা বল্পেন—বেল প্রায় চারট, চলুন, এখানে আর থাকা ঠিক হবে না— আবার সেই কাটাওয়াল ফলর জঙ্গলের মাঠ ও নিবিড় বন পার হয়ে তিরিলপোসি—থলকোবাদ রোডে গাড়ীর কাছে এলুম। আসবার সময় আবার হাতার গল্প উঠলো—কে যেন বল্লে— এখানে হাতী তাড়া করলে পালাবার পথ নেই—সত্যিই বটে । একদিকে জলা, অন্যদিকে পাহাড়ী ঢাল, বনে ভরা। পেছনে সেই কাটাওঁয়াল। বাঁচির জঙ্গল । কি একটা বোটক গন্ধ পেলুম এক জায়গায় । ফরেন্টার বল্লে—সেও পেয়েচে বটে । যাবার সময় এত ভয় হয়নি, আসবার সময় বোধ হয় বাঘ আর চt৩াঁর পায়ের দাগ দেখবার দরুনই মনের মধ্যে এই ছায়ানিবিড় অপরাত্ত্বে বিশেষ সাহস খুজে পাচ্ছিলাম না। বেলা সাড়ে পাঁচটায় তরিলপোসি বাংলোয় পৌছে গেলুম। আজ সকালে চ খেয়ে জঙ্গলের মধ্যে অনেকদূর গেলুম পায়ে হেঁটে। সিংসুম নালা বলে একটি অতি চমৎকার বর্ণ বা পাহাড়ী নদী থেকে থানা কেটে জল আনা হচ্ছে তিরিলপোলি গ্রামের শস্ত-ক্ষেত্রে। সেটা দেখতে গেলুম আমরা । সংৰ্ভুম বা সারেণ্ডাতে যেখানে বনের মধ্যে পাহাড়ী ঝর্ণা সেখানেই সৌন্দৰ্য্য—এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মৃন্দর পাথর-বিছানো ঠাণ্ড জায়গায় জলে পা ডুবিয়ে নিবিড় বনছায়ায় বসে ঝর্ণার মর্মরধ্বনি শুনতে লাগলুম এক একা । চোখে পড়চে শুধু গভীর নিস্তন্ধ অরণ্য, যেদিকে চাই। বেলা বারোটায় ফিরে এলুম। বিকেলে বোনাই স্টেটের বালজুড়ির দিকে যে রাস্ত গিয়েচে পৰ্ব্বত ও অরণ্য ভেদ করে সেদিকে চললুম। সামনে ঘোর জঙ্গলের দিকে রাস্ত নেমে গিয়েচে দেখে মিঃ সিনহা বল্পেন—সন্ধ্যে হয়েচে, আর এখন জঙ্গলে যাওয়া ঠিক হবে না । এই তো জানোয়ারদের বেরুবার সময় । যদি হাতী তাড়া করে ওপরের দিকে উঠে পালাতে গেলেই হাতীতে ধরবে, বড় বিপজ্জনক । মাকড়সার জাল বনে সৰ্ব্বত্র । স্বতরাং ফিরলুম। একটা বড় পাথর-বিছানো স্থানে গাছের তলায় বসলুম। সদ্ধা হয়ে আলচে, সামনের জমি ঢালু হয়ে গিয়ে সিংসুম নালার খাতের দিকে চলেছে। তার ওধারে ঘোর বনে সমাচ্ছন্ন শৈলমাল৷ অন্ধকার দেখাচ্ছে । একটা গাছের ডাল মাথার অনেক ওপরে নত হয়ে আছে । মন এসব স্থানে সম্পূর্ণ অন্যদিকে যায় । কত ধরনের চিন্তা মনে আসে । জীবনের স্বহস্তের গভীরতার দিকে আপনা-আপনি ছুটে চলে। কল্যাণীর কথা আজ সারাদিন মাঝে মাঝে মনে হচ্চে । হয়তো আমার চিঠি ও পাবে কাল ।