পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হে অরণ্য কথা কও 8 পৌছে গেলাম। চারিদিকের দৃপ্ত ও দূরের শৈলশ্রেণী দেখা যায় এই পাহাড়ের ওপরে বলে । সূৰ্য্য অস্ত যাচ্চে, আমি বাংলোর কম্পাউণ্ডে দাড়িয়ে ভাবচি ঐ ঘন শৈল্যারণ্য থেকে এসেচি, ওয়ই মধ্যে কোথায় সেই শিশিরদা জলাভূমি, গুহা, ওরই দুর্গম প্রদেশে সেই অপূৰ্ব্ব স্বন্দর টোয়েৰু জলপ্রপাত, জাতিসিরাং, বাঘের খাবা অঁাকা লেগুন বন । বনের দেবতা মারাং বোংগাকে প্রণাম | আজ সকালে উঠে একটু বেড়াতে গেলুম। বাঙালীর মুখ অনেকদিন দেখিনি। মনোহরপুর বাজারের পথে স্বধীর ঘোষ বলে এক ভদ্রলোকের বাড়ী গিয়ে উঠলুম। র্তার বাড়ী খুলনায়। আনন্দ হওয়াতে তিনি চা খাওয়ালেন, ভাত খেতে বলেন। বড় ভালোক । সেখানে বসে সারেও ফরেস্টের গল্প করলুম। এসে চ খেয়ে ‘দেবযান লিখতে বসি । মিঃ সিন্‌হা আপিস তদারক করতে গেলেন। রেন্‌জ অফিসারের নাম স্থলেমান কারকাটা, হো খ্ৰীষ্টান। রোদ পিঠে দিয়ে বসে লিখঝুম অনেকক্ষণ । তারপর তেল মাখলুম রোদে বলে। মনে পড়চে নদীর ধারের কথা বারাকপুরের, হয়তে ছোট এড়াঞ্চির ফুল ফুটেচে এতদিন । ফণিকাক তামাক খেতে খেতে গল্প করচে বারিকের সঙ্গে । সামান্ত বিশ্রাম করলাম খাওৱাৰ পরে, তারপর ঘুম ভেঙে গেল। সেদিন খামাচরণদা'র বোন পুটিদিদিকে স্বপ্ন দেখেছিলুম, যেন মায়ের মত যত্ন করচে । কল্যাণীর কথা ভাবচি, এতক্ষণে সে কি করচে ? বাইরে চেয়ে দেখচি, রোদ পড়েচে পাহাড়ের শালগাছের গায়ে । বিকেলের শ্লোদ, হঠাৎ মনে পড়লো বাসান গায়ে মোহিনী কাকার চণ্ডীমণ্ডপের কথা । কে আছে লেখানে এখন ? কি করচে তারা ? মুরাতিপুরে আমার মাথার বাড়ীর সেই ছাদটি, সেই শৈশবের লীলাভূমি কলামোচী আমতলা—এত স্থানে বেড়ালুম, এখনও যেন মামার বাড়ীর পিছনের বঁাশবন রহস্তময় মনে হচ্ছে । শৈশবের মতই। বারাকপুরের তেঁতুলগাছটার তলায় আমাদের বাড়ীর পাচিলের পিছনে কখনো যাইনি, বাগানে পাড়ার বহুস্থানে কখনো যাইনি আমাদের গায়ে ৷ উঠে পাহাড়ের ওপরে রোদে একটা পাথরে বললুম। বাংলোর ঠিক পিছনেই পাহাড়ের সৰ্ব্বোচ্চ অংশ । তার একটু নীচের অংশে আমাদের বাংলো। এক মিনিটেই পাহাড়ের মাথায় গিয়ে বসলুম। আমার সামনে বিস্তৃত সারেও ও কোলহান শৈলমাল, আংকুয়া লৌহখনি বহুদূর থেকে লাল দেখাচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে পাহাড়ের মাখায়। সারেও পৰ্ব্বতমালা ও ছোটনাগপুর মালভূমির সংযোগস্থলে সারেও টানেলের মধ্যে দিয়ে ৰেল নাগপুর রেলপথ চলে গিয়েচে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূৰ্ব্ব দিকে। ঐ পর্বত্তালার ওপারে বহুদূরে ঘাটশিলা, যেখানে কল্যাণী রয়েচে । তারও বহুদূরে ওধারে বারাকপুর, আমার উঠানে ছায় পড়েচে, কুটির মাঠের সেই জলাভূমিটি, তিস্থ যেখানে ধান করেচে, ধৰ ধারে জেলের জমি চযেচে এবার দেখে এলাম-ওদের কথা মনে পড়ে গেল। ঐ পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে ঐদিকে কোথায় সেই বনমধ্যস্থ গুহ, ঐ দিকে কোথায় সেই অতি স্বন্দর টোয়েৰু জলপ্রপাত কোথায় সেই বাঘের পায়ের ধাৰা আঁকা সেগুনবন, কোইন নদীর