পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

§8w বিভূতি-রচনাবলী উঠিয়ে নিলুম—নতুবা সাইকেলে এই সন্ধ্যায় সলাই থেকে ছোটনাগরা সাড়ে সাত মাইল ভীষণ বনের পথে যেতে হবে । হাতীর বড় ভয় এ সময়। বঁদিকে সেই স্কউচ্চ প্রায় ২• • • ফুট উচু পৰ্ব্বতমালার দিকে চেয়ে আছি। মোটর ছুটচে বেগে, কখনো ঘন বনে ঢুকচে কম্প্রিটাম লতার শাদা কচি পাতা দোলানো ঝোপের মধ্য দিয়ে, কখনো উঠচে, কখনো নেমে পাৰ্ব্বত্য নদী পার হচ্চে । আমি দেখচি বাদিকের পাহাড়ে কোথাও থানিকটা অনাবৃত পৰ্ব্বতগাত্র, কোথাও একটা গাছ । এই সন্ধ্যায় কল্যাণীর কথা বড় মনে হচ্চে, ওকে হয়তে কাল দেখবো । অনেক দূরে ইছামতীর পারে একটি তেতলা বাড়ীর ওপরের ঘরটিতে—সেখানে এখন কেউ থাকে না—যে ছিল, অনেক কাল আগে সে কোথায় গিয়েচে । গৌরী—তার কথা মনে হচ্চে আজ সন্ধ্যায় । এই সময়ে সে মারা গিয়েছিল আজ বিশ বৎসর আগে । ভগবান তার মঙ্গল করুন । ছুদিকের বন সন্ধ্যার অন্ধকারে নিবিড়তর দেখাচ্চে, সেদিনকার সেই ছোট্ট ঝর্ণাটি পার হলুম, যার ধারে লতাকুঞ্জে রাজা অভিরাম টুংয়ের ঢোল পড়ে আছে । অনেক রাত্রে একবার আমি বাইরে এলুম, আকাশের দিকে চেয়ে দেখি নক্ষত্রসমূহ ঠিক হীরকখণ্ডের মত জলচে, গুয়ার পাহাড়ের মাথায় একটা নক্ষত্র দপ দপ করচে, একবার নিবচে আবার জলচে যেন । আকাশে নক্ষত্রসমূহের এমন দীপ্তি বাংলা দেশে তো দেখিই নি, এমন কি মনে হয় ঘাটশিলাতেও দেখিনি । একটা সারেও বা সিংতুম দর্শনেই আমি মুগ্ধ, কিন্তু অনন্ত ব্ৰহ্মাণ্ডে অমন কত অনন্ত কোটি beauty spot ছড়ানো রয়েচে, ঐ সব নক্ষত্রে কি বিচিত্র জীবনধারা, আত্মার অনন্ত গতিপথে ওদের নিয়েও তার লীলা । বিস্ময়ে স্তন্ধ হয়ে যেতে হয় । বনপাহাড়ের মাথার ওপরে এই অনন্ত ব্ৰহ্মাণ্ডের লীলা, শুধু তার কথাই মনে আনে। সকালে উঠে দেখি খুব কুয়াশা হয়েছে, সাদা ধোয়ার মত কুয়াশার রাশি উপত্যকা থেকে উঠচে ওপরে, গুয়ার পাহাড় ঢেকে দিলে। বডড শীত । পাহাড়ের নীচে বনশ্রেণী কুয়াশায় ঢাকা, ধীরে ধীরে স্বৰ্য্য উঠলো। সূৰ্য্যদেবকে প্রণাম করলুম। আজ এখান থেকে চলে যাবো । সারেও অরণ্যের কাছে বিদায় নিলুম, হে স্বপ্রাচীন অরণ্য, তোমায় প্রণাম করি । শত বিস্ময়ের সৌন্দৰ্য্যভূমি তোমার মধ্যে হাজার বৎসর ধরে লুকানো ছিল, কেউ আসেনি দেখতে-এতদিনে দেখে ধন্ত হয়ে গেলাম। আজ ষোল দিন ধরে বনপুপ স্বাস উপভোগ করেচি তোমার বনে বনে, তোমার বনবিহঙ্গের কলগীতি শুনে কান জুড়িয়েচি শহরের কলঙ্কোলাহলের পরে, তোমাকে প্রণাম করি। কত দেবকাঞ্চন ফুল, কত লুদাম, কত অপরিচিত নাম-না-জানা ফুল, কেকাধনি, জলপ্রপাতের জলপত্তনধ্বনি জনহীন গহন বনে, সেই গুহা দুটি, কত বন্তলতার অদ্ভুত মনোরম ভঙ্গি, ধনেশ পার্থীর কর্কশ চীৎকার, ক্ষুদ্র barking deerএর ঘেঁউ কেউ শব্দ, বস্ত বানরের ডাক (যেমন কাল ডাকছিল আংকুমা