পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৫০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হে অরণ্য কথা কও 8br。 পূৰ্ব্ব সিংডুমের মধ্যে কয়েকটি বড় উপনিবেশ গড়ে উঠেচে–ঘাটশিলা, গালুভি, চাকুলিয়া ও টাটা। শেষটির নাম জগৎবিখ্যাত। কারখানার জন্যেই এখানে অন্নসংস্থানের উপনিবেশ । 3ی পূৰ্ব্ব সিংঙুমে প্রকৃতির পূজারী-ভক্তেরা বন দেখতে পাবে না বিশেষ, যা দেখতে পাবে তা এমন কিছু নয়। কচিৎ দু-একটি স্থান ছাড়া। এমন একটি স্থান হোল ঘাটশিলার সাত মাইল উত্তরে ধারাগিরি নামক একটি ক্ষুদ্র জলপ্রপাত ও আশপাশের পাহাড় বনানী। আর একটি স্থান স্থবৰ্ণরেখার ওপারের তামাপাহাড় ও সামুদেশ । এই সব বনেই অল্পবিস্তর বন্যহস্তী, নেকড়েবাঘ, ভালুক, ময়ুর ইত্যাদি দেখা যাবে। তবে এদের সংখ্যা এত কম যে পাঁচ বছর বনে বেড়িয়েও আমি এ পর্য্যন্ত একটা জ্যাস্ত জানোয়ারকে আমার দৃষ্টি পথের পথিক করাতে সমর্থ হইনি—দুটি একটি শেয়াল বা কাঠবেড়ালি ছাড়া । তা সত্ত্বেও আমি জানি জানোয়ার এখানে আছে । আমার দু-একটি শিকারী বন্ধু এ বিষয়ে দুঃখময় অভিজ্ঞতা অজ্জন করেছেন। যেমন গালুডির লুনা নার্সারির মোহিনী বিশ্বাস মহাশয়। ইনি ভলুক শকার করতে গিয়ে রীতিমত জখম হয়েছিলেন ভালুকের হাতে। বেঁচে গিয়েছিলেন কোন রকমে কিন্তু একখানা হাত অকৰ্ম্মণ্য হয়ে পড়েছে চিরকালের জন্ত । - এখন বলবে পশ্চিম সিংডুমের কথা। বন যা আছে, এখনো পশ্চিম সিংতুমেই আছে। এ অঞ্চলের বড় বন দুটি । সারেণ্ডা ও কোলহান । দুটিই রিজার্ভ ফরেস্ট। সারেও অরণ্যানী বৃহত্তর, প্রায় ৪০০ শত বর্গ মাইল । ভারতবর্ষের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বনানী হচ্ছে এই সারেণ্ডা। আমি তিন বৎসর আগে একবার এই দুটি বনভূমি দেখবার সৌভাগ্যলাভ করেছিলুম বনবিভাগের বড় কৰ্ম্মচারী জে. এন. সিনহার সমভিব্যাহারে ও তার মোটরে । সে অপূৰ্ব্ব অভিজ্ঞতার কথা এমন বিচিত্র সৌন্দর্ঘ্যের রেখাপাত করেছে আমার মনে যে তিন বৎসরেও তা এতটুকু স্নান হয়নি। বাংলা দেশে ফিরে গিয়ে কতবার ভাবতাম সারেও বনের নানা বিচিত্র সৌন্দৰ্য্যভূমির কথা, নানা জল-প্রপাতের কথা, নানা পাথরের বাধানো বন্ত নদী ও ঝর্ণার কথা, নানা বনপুষ্পের স্বরভিবাহী দক্ষিণ বায়ুর কথা, শিলাতলে বিছিয়ে থাকা বন্য শিউলির কথা, গভীর রাত্রে বন্য বিভাগের বাংলোঘরে শুয়ে আশপাশের বনে কোথাও বন্য হস্তীর বৃংহিতধ্বনি শুনবার কথা । 曙 তাই ভাবলুম ছেলেটিকে নিয়ে এই স্বযোগে আর একবার সারেও অরণ্য দেখতে বেরুবো । কিন্তু এর মধ্যে একটা কথা আছে । পশ্চিম সিংডুমের এই অরণ্য-অঞ্চল মোটরযোগে ভিন্ন দেখা প্রায় অসম্ভব। চার শত বর্গমাইল-ব্যাপী এই বনভূমির কোথায় কি আছে তা সাধারণের জানবার কথাও নয়। স্বতরাং বন-বিভাগের কর্মচারীদের সাহায্যও নিতান্ত প্রয়োজন। ট্রেনে উঠে এ বন দেখবার