পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ሯ: • বিভূতি-রচনাবলী সুযোগ প্রায় নেই, কেবল একটি উপায় ছাড়া । সেই উপায়টি অবলম্বন করা গেল । মনোহরপুরের স্টেশন থেকে একটা লাইট রেলওয়ে চলে গিয়েছে চোদ মাইল দূরে চিড়িয়া পাহাড়ে। এই পাহাড় থেকে ইণ্ডিয়ান স্টীল করপোরেশন লৌহপ্রস্তর সংগ্রহ করে বার্ণপুরের কারখানায় চালান দেয়। রেল-লাইনটা ওদেরই। এই রেলপথ গভীর অরণ্যের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে প্রায় আট নয় মাইল কিম্ব আর একটু বেশি। এইটি সারেও অরণ্যের উত্তরপশ্চিম প্রাস্তদেশে । স্বতরাং যদি মনোহরপুর থেকে চিড়িয়া খনির রেলে চড়া যায় তাহলে বিনা মোটরে সাত-আট মাইল বন অনায়াসে দেখা যেতে পারে। চিড়িয়া রেললাইন খনিওয়ালাদের নিজেদের তৈরী, যাত্রী-বহনের উদ্দেশ্যে তা তৈরী হয়নি, বাইরের কোন লোককে উঠতে দেয়ও না । এজন্য বনবিভাগের লোকের সাহায্য দরকার । বেলা তিনটের নাগপুর প্যাসেঞ্চারে আমরা ঘাটশিলা থেকে উঠে সন্ধ্যের সময়ে চক্ৰধরপুর গিয়ে নামলুম। এই পৰ্য্যন্তই টিকিট করা হয়েছিল। এর পরেই পাহাড় জঙ্গলের বেশ ভাল দুখ্য রেলপথের দুধারে পড়বে, কিন্তু নৈশ অন্ধকারে আমরা সে সব কিছুই ভালো করে দেখতে পাবো না । তার চেয়ে রাত্রিটা চক্ৰধরপুর স্টেশনে কাটিয়ে পরদিনের ভোরবেলা যে নাগপুর প্যাসেঞ্জাব আসে, তাতে ওঠাই যুক্তিযুক্ত। সবটা দিনের আলোয় দেখতে পাওয়া যাবে । চক্ৰধরপুর স্টেশনে ওয়েটিংরুমে গিয়ে বিছানাপত্র বিছিয়ে দিয়ে আমরা সটান শুয়ে পড়লাম। আদ্রা প্যাসেঞ্জার এল একটু পরে। কয়েকটি ভদ্রলোক ওই ট্রেনে রচি ও পুরুলিয়া থেকে এলেন। একটি ভদ্রলোকের নাম মিঃ দুবে । রেলপুলিসে কি কাজ করেন। আমার সঙ্গে দু-এক কথায় খুব আলাপ জমে গেল। পথে কি চমৎকার ভাবেই আলাপ জমে। আমি অনেকবার দেখেছি রেলে দূরদেশে বেড়াবার সময় রেল-কামরার মধ্যেকার যাত্রীরা পরস্পর আত্মীয় হয়ে গিয়েছে । এ ওকে জলপাত্র দিচ্ছে ব্যবহার করতে, ও ওকে সিগারেট দিচ্ছে, এ খাওয়াচ্ছে ওকে—ওদের মধ্যে শিখ আছে, পাঞ্জাবী আছে, বিহারী আছে, বাঙালী আছে। একটি সৰ্ব্বজনীন ভ্রাতৃভাব জেগে ওঠে ওদের মধ্যে, দেড়দিন বা দুদিনের জন্তে । এমন কি বিদায় নেবার সময় কষ্ট হয়, সবাই পরস্পরের ঠিকান নেয় চিঠি দেবে বলে । 麵 যদিও শেষ পর্য্যস্ত হয়তো চিঠি দেওয়া হয় না। এখানে মিঃ দুবের সঙ্গে আমার এই ধরনেরই আলাপ হয়ে গেল। তিনি আমার কুবিধা দেখবার জন্যে কেন এত ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, কি করে বলবো । অনেক রাত্রে দেখি মি: দুবে আমায় ডাকাডাকি করচেন। —যুমুলেন নাকি ? —না ! কি বলুন ।