পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী মাসের শেষে ছেলেদের প্রোগ্রেস-রিপোর্ট ইত্যাদি লেখার ভিড় পড়িয়া গেল । হেডমাস্টারের কড়া ছকুম আছে, মাসের শেষদিন কোন টীচার ছুটির পর বাড়ী যাইতে পারিবে না-বসিয়া বসিয়া সব প্রোগ্রেস-রিপোর্ট লিখিয়া হেডমাস্টারের সই করাইয়া বিভিন্ন ক্লাসের মার্কের খাতায় ছেলেদের মার্ক জমা করিয়া, ক্লাসের হাজিরা-বহিতে ছেলেদের গর-হাজির। বাহির করিয়া তবে যাইতে পারিবে । এই সব কেরানীর কাজ সাঙ্গ করিয়া বাড়ী ফিরিতে রাত সাড়ে সাতটা বাজিয়া যায়। স্কুলের প্রথানুযায়ী মাস্টারদের এদিন জলখাবার দেওয়া হয় স্কুলের খরচে। ধন্ধুবাবু ছুটির পর সাহেবের কাছে জলখাবারের টাকা আদিতে গেলেন—বরাবর তিনিই যান ও কোন দোকান হইতে খাবার কিনিয়া আনেন। বরাদ্দ আছে সাড়ে পাচ টাকা। সাহেব যদুবাবুর হাতে সাতটি টাকা দিয়া বলিলেন, আজ ভাল করেখাও সকলে—লাড রসগোল্লা বেশী করে নিয়ে এস। যদুবাবু প্রথমে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়া দুই পেয়ালা চা খাইলেন, তারপর ছয় টাকার খাবার কিনিলেন এক দোকান হইতে। বাকী একটি টাকা তাহার উপরি-পাওনা। অন্য অন্য বার আট আনা পয়সা উপরি-পাওনা হয় অর্থাৎ পাচ টাকার খাবার কিনিয়া আট আন পকেটস্থ করেন। স্কুলে আসিতে প্রায় সন্ধ্যা হইল। মাস্টারের অধীর আগ্রহে জলখাবারের প্রত্যাশায় বসিয়া আছেন। একজন বলিলেন, এত দেরি কেন যদুবাৰু? —অারে, গরম গরম ভাজিয়ে আনচি । আমার কাছে বাব। ফাকি দিতে পারবে না কোন দোকানদার। বসে থেকে তৈরী করিয়ে ষোল আনা দাড়ি ধরে ওজন করিয়ে তবে— অন্যান্য মাস্টারদের অগাধ বিশ্বাস যন্ধুবাবুর উপরে । সকলেই বলেন, যদুবাবুর মত কিনতে-কাটতে কেউ পারে না—পাকা লোক একেবারে যাকে বলে । টচারদের ঘরে বেঞ্চির উপর ছোট ছোট পাতা পাতিয়া খাবার পরিবেশন করা হইল। ধৰুবাৰু এখানে খাইবেন না, তিনি বাড়ী লইয়া যাইবেন। জ্যোতিৰ্ব্বিনোদ মশায় দ্বিয়ে-ভঞ্জা জিনিস খাইবেন না, তিনি নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ, তাহার জন্তু শুধু সন্দেশ-রসগোল্লা আনা হইয়াছে। নতুন টাচার বেঞ্চির এক পাশে থাইতে বসিয়াছিলেন। তাহার সঙ্গে বড় সাধারণত কাহারও মেশানেশি নাই। তিনি নি:শকে ঘাড় গুজিয়া খাইতেছিলেন। যদুবাৰু সামনে গিয়া বলিলেন, আর দু-একখানা লুচি দেব ? —না না, আর দেবেন না । —একটা রসগোল্লা ? অন্যান্ত টীচার সকলেই বিভিন্ন বেঞ্চি হইতে নতুন টীচারকে খাওয়ার জন্য, দুই-একটা অতিরিক্ত মিষ্টি লওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলেন।