পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের রচনাদি বিষয়ে ইতিপূর্বে যারা ভূমিকা লিখেছেন তারা নানাভাবে তার লেখা বিশ্লেষণ করেছেন। এবং তা পাণ্ডিত্যপূর্ণ। আমি বর্তমান খণ্ডের অন্তভুক্ত উপন্যাস বা গল্প বা অরণ্যকথা বিষয়ে যা বলতে যাচ্ছি তা একটু অন্যরকম হবে, কারণ আমি রচনার চেয়েও রচনা-লেখকের মূল বৈশিষ্ট্যটা আমার এই ভূমিকায় আবিষ্কারের চেষ্টা করব। আমার পক্ষে এ কাজ অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে এ জন্য যে, আমি ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে মিশেছি এবং কখনো বা ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি। অবশ্য তা করলেই যে, কোনো মানুষকে সম্পূর্ণ জানা যায় তা নয়, তবে আমি অনুভূতির সেনসিটিভ প্লেটে তার জীবন ও জীবনদর্শনের ছাপ ধরার চেষ্টা করেছি সব সময়। এবং আমি আমার সে অনুভূতিকে বলব সহানুভূতি। তার সঙ্গে শ্রদ্ধা ও প্রতি যোগ করা যেতে পারে। অতএব তার প্রতি আমার অভিগম বা অ্যাপ্রোচ হবে অনেকটা হৃদয়ের পথে, যদিও সবখানি নয়। বিভূতিবাবুর চরিত্রে এমন অনেক ছোটখাটাে পরস্পর-বিরোধিতা স্পষ্ট রূপে প্রকট, যার জন্ত আমি তার চরিত্রকে আচরণকে কৌতুকের দৃষ্টিতেও দেখেছি, এবং একটি ভ্রমণকাহিনীতে তা বিস্তারিতভাবে উদঘাটিত করে তাকে পড়েও শুনিয়েছি। কিন্তু এখানে তার আচরণ-বৈশিষ্ট্য বিষয়ে বিশেষ কিছুই বলব না। এখানে যে মানুষটি শিল্পী, যিনি কবি, যিনি দার্শনিক, যিনি প্রকৃতিপ্রেমিক, সেই বিচিত্র মাহুষটির মনের গভীরে কি আছে (যা অবশু সম্পূর্ণ করে কেউ জানবে না কোনো দিন, এবং তিনি নিজেও যা সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারেন নি, কেউ পারে না) সেইটি দেখার চেষ্টা করব মাত্র। “চেষ্টা করব" কথাটার পুনরুক্তি করছি। সেজন্য প্রথমেই অল্পবর্তন উপন্যাসখানি নিয়ে আলোচনা শুরু করছি। কাহিনীটিতে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যেন বাইরে থেকে দেখা কয়েকটি চরিত্রের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। তা মনে হলে অন্যায় হবে না কিছু। তবু আসলে অসুবর্তনের অনেকখানি তার নিজেরই কথা । তিনি শিক্ষক ছিলেন, তিনি দরিদ্র ছিলেন, তিনি বহুদিন মাসে ৩৬ টাকা বেতনে কাজ করেছেন, টিউশন করেছেন, অন্ত দরিত্র শিক্ষকদের সান্নিধ্যে বাস করেছেন, এবং এ কাহিনীতে যতগুলি শিক্ষককে চিত্রিত করেছেন (তাদের মধ্যে ক্লার্কওয়েল, আলম ও রামেন্দু ছাড়া) তারা সবাই অল্পবিস্তর বিভূতিবাবুরই নানা খণ্ডিত সত্তা। তিনি নিজেকে এদের মধ্যে ভাগ করে দেখেছেন । ক্লার্কওয়েলের যিনি প্রোটোটাইপ ( ক্লারিজ লাহেব ) তার চরিত্র যেন একটি ফোটোগ্রাফ, বিভূতিবাবু এখানে দৰ্শক, নিজে তার মধ্যে নেই। এ চরিত্রটি অপরূপ, বর্ণনা করার স্থানাভাব। কোন চরিত্রটাই বা অপরূপ নয় অল্পবর্তনে। প্রত্যেকে এক গোষ্ঠীভুক্ত হয়েও পরম্পর থেকে এমন স্বতন্ত্র যে এদের চরিত্র আকৃতে বিভূতিবাবুর এক অসাধারণ ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। অমৃবর্তনের হাই স্কুলটি কলকাতা শহরের এবং শিক্ষকদেরও বাস শহরেই। কিণ্ড তারা এমনি হতচ্ছাড়া এবং দারিদ্র্যপীড়িত যে তারা যেন শহরে নয়, কোন এক ভাঙা গ্রামে বাস