পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ہ یا আসেন নাই—স্নেহ-ভালবাসার পাট উঠিয়া গিয়াছে। এমন দরদী শ্রোতা পাইয়া তাহারও মনের উৎস-মূখ খুলিয়া যায়। প্রথম জীবনের চাকুরির কথা বলেন। বহুকাল-পরলোকগত পত্নীর সম্বন্ধে বলেন, মহুকুলবাবুর কথাও পাড়েন। নিভাননী সহানুভূতি জানায়, একমনে শুনিতে শুনিতে কথন তাহার চোখ ছলছল করিয়া উঠে । ক্ষেত্রবাবু সবদিন আসিতে পারেন না। টুইশনি, বাড়ীতে ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনা —এসব সারিয়া রোজ হাসপাতালে আসা চলে না। নারাণবাৰু আসেন বলিয়া হয়তো তেমন দরকারও হয় না । সেদিন নারাণবাবু টুইশানি সারিয়া বউবাজারের মোড় হইতে একটা বেদান ও দুইটি কমলালেবু কিনিলেন। অনেকদিন কিছু হাতে করিয়া যাইতে পারেন নাই, আজ টুইশানির মাহিন। পাইয়াছেন। হাসপাতালের হলে দেখিলেন, হলের কোণে নিভাননীর সে বিছানাট খালি, লোহার খাটটা হাড়পাজরা বাহির করা পড়িয়া আছে। নারাণবাবু ভাবিলেন, তাহার ভুল হইয়াছে। কোন ঘরে আসিতে কোন ঘরে আসিয়াছেন, বুদ্ধবয়সে মনে থাকে না। বাহির হইতে গিয়া বারান্দায় জলের না কিসের ড্রামটি চোখে পড়িল। না, এই ড্রাম রহিয়াছে—এই তো ঘর। আবার তিনি ঘরে ঢুকিলেন। পাশের বিছানার এক রোগী বলিল, আপনি কাকে খুঁজছেন বলুন তো ? ও, সেই বউটির আপনি কেউ—আহা, আপনি জানেন না! ও তো আজ ছুপুরে হয়ে গিয়েছে। বউটর স্বামী এল, আরও কে কে এল—নিয়ে গেল, প্রায় তখন তিনটে । আহা, আমরা সবাই–কথা কইতে কইতে পাশ ফিরল আর অমনি হয়ে গেল। হার্টে কিছু ছিল না। আহা, আপনি কে হতেন ওঁর—ইত্যাদি । নারাণবাৰু কিছু না বলিয়া ফলগুলি হাতে করিয়া বাহিরে আসিলেন। আজ ক্ষেত্রবাবুকে কি স্কুলে দেখেন নাই ? মা বোধ হয়। এখন মনে পড়িল, সারাদিন স্কুলে ক্ষেত্রবাবুর সঙ্গে দেখা হয় নাই বটে। আজ হাসপাতালে আসিবেন বলিয়া টুইশানিতে গিয়াছিলেন ছুটির পরেই, স্বতরাং চায়ের দোকানেও যান নাই। নতুবা ক্ষেত্রবাবুর অনুপস্থিতি চোখে পড়িত। নিজের ছোট ঘরের নিঃসঙ্গ শয্যায় শুইয়া বৃদ্ধ কত রাত পৰ্য্যন্ত ঘুমাইতে পারিলেন না। স্কুলের দুর্দশা উপস্থিত হইল এপ্রিল মাস হইতে। এপ্রিল মাসে মাস্টারদের বেতন ঠিক সময় দেওয়ার উপায় রহিল না ; কারণ, এবার জানুয়ারি মাসে আশাহরুপ ছেলে ভর্তি হয় নাই, বরং অনেক ছেলে ট্রান্সফার লইয়া চলিয়া গিয়াছে। এ স্কুলে ছেলেদের মাহিনী অন্য স্কুল হইতে বেশী, এই সব দুঃসময়ে লোক বেশী মাহিনী দিতে আর চায় না। পূৰ্ব্বে ভাবা গিয়াছিল, সাহেব-মেম স্কুলে পড়াইবে বলিয়া পাড়ার বড়লোকেরা ছেলে এখানেই ভৰ্ত্তি করিবে ; কিন্তু গত ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফল তেমন ভাল না হওয়ায় এ স্কুলে পড়াইতে অনেকেই দ্বিধা বোধ করিল। ফলে ছেলে অনেক কমিয়া গিয়াছে এবার ।