পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S& বিরাজ-বেী অনির্দিষ্ট মৃত্যুশয্যার অনুসন্ধানে গিয়াছিল, সেই যাওয়ায় আর এই আসায় কি প্ৰভেদ। এখন সে বাড়ী যাইতেছে। তাহার দুর্বল দেহ পথে যতই সকাতরে বিশ্রাম ভিক্ষা চাহিতে লাগিল, সে ততই ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত হইয়া উঠিতে লাগিল। কোন কারণে কোথাও বিলম্ব করিতে সে সম্মত নয়। তাহার কাসি যক্ষ্মায় পরিণত হইয়াছে, ইহা সে টের পাইয়াছিল, তাই আশঙ্কার অবধি ছিল না, পাছে যাওয়া না ঘটে। ছেলে-বেলা হইতে একটা বিশ্বাস তাহার বড় দৃঢ় ছিল, দেহ নিষ্পাপ না হইলে কেহ স্বামীর পায়ে মরিতে পায় না। সে এই উপায়ে মরণের পূর্বে একবার নিজের দেহটাকে যাচাই করিয়া লইতে চায়—তাহার প্রায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণ হইয়াছে কি না। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারিলে সে নিৰ্ভয়ে মহানন্দে জীবনের পরপারে দাড়াইয়া তার জন্য অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিবে ; কিন্তু দামোদরের এধারে আসিয়া তাহার হাত-পা ফুলিয়া উঠিল, মুখ দিয়া অধিক পরিমাণে রক্ত পড়িতে লাগিল-আর কিছুতেই পা চলিল না। সে হতাশ হইয়া একটা গাছতলায় ফিরিয়া আসিয়া ভয়ে কঁাপিতে লাগিল । এ কি ভয়ানক অপরাধ যে, এত করিয়াও তাহার শেষ আশা মিটাল না ! তাহার এ জন্ম গেল, পরজন্মেও আশা নাই, তবে সে আর কি করিবে !! . আশা নাই। তবুও সে গাছতলায় পড়িয়া সারাদিন হাত জোড় করিয়া স্বামীর পায়ে মিনতি জানাইতে লাগিল । পরদিন তারকেশ্বরের কাছাকাছি কোথায় হাটবার ছিল। প্ৰভাত হইতে সে পথে গরুর গাড়ী চলিতে লাগিল। সে সাহসে ভর করিয়া এক বৃদ্ধ গাড়োয়ানকে আবেদন করিল। বুড়ো মানুষ তাহার কান্না দেখিয়া, সম্মত হইয়া তাহাকে গাড়ী করিয়া তারকেশ্বরে পৌছাইয়া দিয়া গেল। বিরাজ স্থির করিল, এই মন্দিরের আশে-পাশে কোথাও সে পড়িয়া থাকিবে । এখানে কত লোক আসে যায়, যদি কোন উপায়ে একবার ছোটবৌয়ের কাছে সংবাদ পাঠাইতে পারে।