পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিরাজ বৌ

হুগলী জেলার সপ্তগ্রামে দুই ভাই নীলাম্বর ও পীতাম্বর চক্রবর্ত্তী বাস করিত। ও অঞ্চলে নীলাম্বরের মত মড়া পোড়াইতে, কীর্ত্তন গায়িতে, খোল বাজাইতে এবং গাঁজা খাইতে কেহ পারিত না। তাহার উন্নত গৌরবর্ণ দেহে অসাধারণ শক্তি ছিল, গ্রামের মধ্যে পরোপকারী বলিয়া তাহার যেমন খ্যাতি ছিল, গোয়ার বলিয়া তেমনই একটা অখ্যাতিও ছিল; কিন্তু ছোটভাই পীতাম্বর সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির লোক। সে খর্ব্বকায় এবং কৃশ। মানুষ মরিয়াছে শুনিলেই তাহার সন্ধ্যার পর গা কেমন করিত। দাদার মত অমন মুর্খও নয়, গোয়ারতুমির ধার দিয়াও সে চলিত না। সকাল-বেলা ভাত খাইয়া দপ্তর বগলে করিয়া হুগলীর আদালতের পশ্চিম দিকের একটা গাছতলায় গিয়া বসিত এবং সমস্ত দিন আর্জি লিখিয়া যা উপার্জ্জন করিত, সন্ধ্যার পূর্বেই বাড়ী ফিরিয়া সেগুলি বাক্সে বন্ধ করিয়া ফেলিত। রাত্রে ঘরের দরজা-জানালা স্বহস্তে বন্ধ করিত এবং স্ত্রীকে দিয়া পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা করাইয়া লইয়া তবে ঘুমাইত।

 আজ সকালে নীলাম্বর চণ্ডীমণ্ডপের একাধারে বসিয়া তামাক খাইতেছিল, তাহার অনুঢ়া ভগিনী হরিমতি নিঃশব্দে আসিয়া পিঠের কাছে হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া দাদার পিঠে মুখ লুকাইয়া কঁদিতে লাগিল। নীলাম্বর হুকাটা দেওয়ালে ঠেস দিয়া রাখিয়া, আন্দাজ করিয়া এক হাত তাহার বোনের মাথার উপর রাখিয়া, সন্দেহে কহিল, সকাল-বেলাই কান্না কেন দিদি?