পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tał বিরাজ-বেী মধ্যে টানিয়া লইয়া গিয়া বলিল, ছি, সমস্ত জেনে শুনে কি ভাইয়ের সঙ্গে কেলেঙ্কারী কিয়াতে আছে ? নীলাম্বর উদ্ধতভাবে জবাব দিল, জানি ব’লে কি ভয়ে জড়সড় হ'য়ে থাকিব ? আমার সব সহ হয় বিরাজ, ভণ্ডামী সহ হয় না । বিরাজ বলিল, কিন্তু তুমি ত এক নও, আজ হাত ধ’রে বার করে দিলে কাল কোথায় দাড়াবে সে কথা একবার ভাব কি ? নীলাম্বর বলিল, না । যিনি ভাবধার তিনি ভাববেন, আমি ভেবে মিথ্যে দুঃখ পাই নে। বিরাজ জবাব দিল, তা ঠিক ! যার কাজের মধ্যে খোল বাজান আর মহাভারত পড়া-তার ভাবনা চিন্তে মিছে ! কথাগুলি বিরাজ মধুর করিয়া বলে নাই, নীলাম্বরের কানেও তাঁহা মধু বর্ষণ করিল না, তথাপি সে সহজভাবে বলিল, ওগুলো আমি সবচেয়ে বড় কাজ ব’লেই মনে করি। তা ছাড়া, ভাবতে থাকলেই কি কপালের লেখা মুছে যাবে ? বলিয়া সে একবার কপালে হাত দিয়া বলিল, চেয়ে দেখ, বিরাজ, এইখানে লেখা ছিল ব'লে। অনেক রাজা-মহারাজাকে গাছতলায় বাস করতে হয়েচে-আমি ত অতি তুচ্ছা! বিরাজ অন্তরের মধ্যে দগ্ধ হইয়া যাইতেছিল, বলিল, ও-সব মুখে বলা যত সহজ, কাজে করা তত সহজ নয়! তা ছাড়া তুমিই না হয় গাছতলায় বাস করতে পার, আমি ত পারি নে। মেয়েমানুষের লজ্জাসরাম আছেআমাকে খোসামোদ করে হক, দাসীবৃত্তি করে হ’ক, একটুখানি আশ্রয়ের মধ্যে বাস কয়তেই হবে। ছোটভাইয়ের মন যুগিয়ে থাকতে না পার, অন্ততঃ হাতাহাতি ক’রে সব দিক মাটি ক'র না। বলিয়া সে চোখের জল চাপিয়া দ্রুতপদে বাহির হইয়া গেল । স্বামী-স্ত্রীতে ইতিপূর্বে অনেকবার অনেক কলহ হইয়া গিয়াছে। নীলাম্বর তাহ জানিত, কিন্তু আজ যাহা হইয়া গেল তাহা কলহ নাহে--