পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ved विद्धांछ-(दी থাকিত। পাছে তাহার উপর গুরুজনের অভিসম্পাত পড়ে, পাছে কোন অকল্যাণ হয়, এই আশঙ্কায় সে মনে মনে ব্যাকুল হইয়া উঠিত, ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করিত, লুকাইয়া ‘হরির লুঠ' দিয়া নদীতে ভাসাইয়া দিত। এমনই করিয়া তাহার দিন কাটিতেছিল। দুর্গাপূজা আসিয়া পড়িল। সে আর থাকিতে না পারিয়া গোপনে একটা টাকা সংগ্ৰহ করিয়া একখানি কাপড় ও কিছু মিষ্টান্ন কিনিয়া সুন্দরীকে গিয়া ধরিল। সুন্দরী বসিতে আসন দিলে, তামাক সাজিয়া দিল, নীলাম্বর আসন গ্ৰহণ করিয়া তাহার জীৰ্ণ মলিন উত্তরীয়ের ভিতর হইতে সেই কাপড়খানি বাহির করিয়া বলিল, তুই তাকে মানুষ করেছিল সুন্দরী, যা একবার দেখে আয়। আর সে বলিতে পারিল না, মুখ ফিরাইয়া চাদরে চোখ মুছিল। সুন্দরী ইহাদের কষ্ট্রের কথা জানিত । গ্রামের সকলেই জানিত । কহিল, সে কেমন আছে বড়বাবু? নীলাম্বর ঘাড় নাড়িয়া বলিল, জানি নে ? সুন্দরীর বুদ্ধি বিবেচনা ছিল, সে আর প্রশ্ন করিল না। পরদিন সকালেই যাইবে জানাইতে নীলাম্বর কিছু পাথেয় দিতে গেল, সুন্দরী তাহা গ্ৰহণ করিল না, কহিল, না বড়বাবু, তুমি কাপড় কিনে ফেলেচ, না হ’লে এও আমি নিয়ে যেতাম না-তোমার মত আমিও যে তাকে মানুষ করেচি । নীলাম্বরের চোখ দিয়া আবার জল গড়াইয়া পড়িল, সে মুখ ফিরাইয়া ক্ৰমাগত চোখ মুছিতে লাগিল। এমন একটা সমবেদনার কথা সে কাহারও কাছে পায় নাই। সবাই কহে, সে ভুল করিয়াছে, অন্যায় করিয়াছে, পুটি হইতেই তাহদের সর্বনাশ হইয়াছে! উঠবার উদ্যোগ করিয়া সে সুন্দরীকে বিশেষ করিয়া সাবধান করিয়া দিল, যেন এই সব দুঃখকষ্টের কথা পুটি কোন মতে না জানিতে পারে।