কে তোকে দিলে? আমরা পণ দিই বটে, কিন্তু মেয়ের বিয়েতে এক পয়সাও নিইনে—আমি পুঁটিকে দান করব।
বিরাজ স্বামীর মুখচোখের ভাব লক্ষ্য করিয়া হঠাৎ হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, আচ্ছা অচ্ছা, তাই ক’র—এখন খাও—ছুতো করে যেন উঠে যেও না।
নীলাম্বর হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, আমি বুঝি ছুতো করে উঠে যাই।
বিরাজ কহিল, না—একদিনও না। ও দোষটি তোমার শত্তুরেও দিতে পারবে। এজন্যে কতদিন যে আমাকে উপোস করে কাটাতে হয়েচে, সে ছোটবৌ জানে। ও কি! খাওয়া হয়ে গেল নাকি?
বিরাজ ব্যস্ত হইয়া পাখাটা ফেলিয়া দিয়া দুধের বাটি চাপিয়া ধরিয়া বলিল, মাথা খাও, উঠ না—ও পুঁটি শিগগির যা—ছোটবোয়ের কাছ থেকে দুটো সন্দেশ নিয়ে আয়—না না, ঘাড় নাড়লে হবে না—তোমার কখ্খন পেট ভরেনি—মাইরি বলচি, আমি তা হলে ভাত খাব না—কাল রাত্তির একটা পর্যন্ত জেগে সন্দেশ তৈরি করেচি।
হরিমতি একটা রেকাবিতে সবগুলো সন্দেশ লইয়া ছুটিয়া আসিয়া পাতের কাছে রাখিয়া দিল।
নীলাম্বর হাসিয়া উঠিয়া বলিল, আচ্ছা, তুমিই বল, এতগুলো সন্দেশ এখন খেতে পারি?
বিরাজ মিষ্টান্নের পরিমাণ দেখিয়া মুখ নীচু করিয়া বলিল, গল্প করতে করতে অন্নমনস্ক হয়ে খাও—পারবে।
তবু খেতে হবে?
বিরাজ কহিল, হাঁ। হয়, মাছ ছাড়তে পাবে না, না হয় এ-জিনিসটা একটু বেশী করে খেতেই হবে।
নীলাম্বর রেকাবিটা টানিয়া লইয়া বলিল, তোর এই খাবার জুলুমের ভয়ে ইচ্ছে করে বনে গিয়ে বসে থাকি।
পুঁটি বলিয়া উঠিল, আমাকেও দাদা—
বিরাজ ধমক দিয়া উঠিল, চুপ কর পোড়ামুখী, খাবিনে ত বাঁচবি কি করে? এই নালিশ করা বেরুবে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে।
দুই
মাস দেড়েক পরে, পাঁচ দিন জ্বরভোগের পর আজ সকাল হইতে নীলাম্বরের জ্বর ছিল না। বিরাজ বাসী কাপড় ছাড়াইয়া স্বহস্তে কাচা কাপড় পরাইয়া দিয়া, মেঝেয় বিছানা পাতিয়া শোয়াইয়া দিয়া গিয়াছিল। নীলাম্বর জানালার বাহিরে একটা নারিকেল বৃক্ষের পানে চাহিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া ছিল। ছোট বোন হরিমতি