পাঁচ
দিন-দুই পরে নীলাম্বর বলিল, সুন্দরীকে দেখচি নে কেন বিরাজ?
বিরাজ বলিল, আমি তাকে ছাড়িয়ে দিয়েচি।
নীলাম্বর পরিহাস মনে করিয়া বলিল, বেশ করেচ। বল না কি হয়েছে তার?
বিরাজ বলিল, কি আবার হবে, আমি সত্যিই তাকে ছাড়িয়ে দিয়েছি।
নীলাম্বর তথাপি কথাটা বিশ্বাস করিতে পারিল না। অতিশয় বিস্মিত হইয়া মুখপানে চাহিয়া বলিল, তাকে ছাড়িয়ে দেবে কি করে? আর সে যত দোষই করুক, কতদিনের পুরনো লোক তা জান? কি করেছিল সে?
বিরাজ বলিল, ভাল বুঝেচি তাই ছাড়িয়ে দিয়েচি।
নীলাম্বর বিরক্ত হইল, বলিল, কিসে ভাল বুঝলে তাই জিজ্ঞেস কচ্চি।
বিরাজ স্বামীর মনের ভাব বুঝিল। ক্ষণকাল নিঃশব্দে মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, আমি ভাল বুঝেচি—ছাড়িয়ে দিয়েচি, তুমি ভাল বুঝ, ফিরিয়ে আন গে।—বলিয়া উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করিয়া রান্নাঘরে চলিয়া গেল।
নীলাম্বর বুঝিল বিরাজ রাগিয়াছে, আর কোন কথা কহিল না। সে ঘণ্টা-খানেক পরে ফিরিয়া আসিয়া রান্নাঘরের দরজার বাহিয়ে দাঁড়াইয়া ধীরে ধীরে বলিল, কিন্তু ছাড়িয়ে যে দিলে, কাজ করবে কে?
এবার বিরাজ মুখ ফিরাইয়া হাসিল। তাহার পরে বলিল, তুমি।
নীলাম্বর হাসিয়া বলিল, তবে দাও এঁটো বাসনগুলো মেজে ধুয়ে আনি।
বিরাজ হাতের খুন্তিটা ঝনাৎ করিয়া ফেলিয়া হাত ধুইয়া কাছে আসিয়া পায়ের ধুলা মাথায় লইয়া বলিল, যাও তুমি এখান থেকে। একটা তামাশা করবার জো নেই—তা হলেই এমন কথা বলে বসবে যে, কানে শুনলে পাপ হয়।
নীলাম্বর অপ্রতিভ হইয়া বলিল, এও কানে শুনলে পাপ হয়? তোর পাপ যে কিসে হয় না, তা ত বুঝিনে বিরাজ?
বিরাজ বলিল, তুমি সব বোঝ। না বুঝলে এত কাজ থাকতে এঁটো বাসনের কথা তুলতে না—যাও, আর বেলা ক’রো না, স্নান করে এসো—আমার রান্না হয়ে গেছে।
নীলাম্বর চৌকাঠের উপর বসিয়া পড়িয়া বলিল, সত্যি কথা বিরাজ, সংসারের কাজকর্ম করবে কে?
বিরাজ চোখ তুলিয়া বলিল, কাজ আবার কোথায়? পুঁটি নেই, ঠাকুরপোরা নেই, আমিই ত কাজের অভাবে সারাদিন বসে কাটাই। বেশ ত, কাজ যখন আটকাবে তখন তোমাকে জানাব।
নীলাম্বর বলিল, না বিরাজ, সে হবে না, দাসী-চাকরের কাজ আমি তোমায়