বিরাজ কাজ করিতে করিতে বলিয়া বসিল, আজ ত আমি যাব না—আমার অসুখ কচ্চে!
নীলাম্বর অবাক হইয়া বলিল, অসুখ কচ্চে কি রে?
বিরাজ বলিল, হাঁ, অসুখ কচ্চে—বড্ড অসুখ কচ্চে,—বলিয়া মুখ ভার করিয়া পিতলের কলসীটা কাঁকালে তুলিয়া লইয়া নদীতে জল আনিতে চলিয়া গেল। সেদিন গাড়ি ফিরিয়া গেল। রাত্রে অনেক সাধাসাধি, অনেক বোঝানোর পর সে দুদিন পরে যাইতে সম্মত হইল। দু’দিন পরে আবার গাড়ি আসিল।
নীলাম্বর সংবাদ নিবামাত্রই বিরাজ একেবারে বাঁকিয়া বসিল;—না, আমি কক্ষণ যাব না।
নীলাম্বর আরও আশ্চর্য হইয়া বলিল, যাবিনে, কেন?
বিরাজ কাঁদিয়া ফেলিল—না, আমি যাব না। আমার গয়না কৈ, আমি দীন-দুঃখীর মত কিছুতেই যাব না।
নীলাম্বর রাগিয়া বলিল, আজ তোর গয়না নাই সত্যি, কিন্তু যখন ছিল, তখন ত একদিন ফিরেও চাসনি?
বিরাজ চুপ করিয়া আঁচল দিয়া চোখ মুছিতে লাগিল।
নীলাম্বর পুনরায় কহিল, তোর ছল আমি বুঝি। আমার মনে মনে সন্দেহ ছিলই, তবে ভেবেছিলাম, দুঃখে-কষ্টে বুঝি তোর হুঁশ হয়েছে—তা দেখছি কিছুই হয়নি। ভাল, তুইও শুকিয়ে মর্, আমিও মরি।—বলিয়া সে বাহিরে গিয়া গাড়ি ফিরাইয়া দিল।
দুপুরবেলায় নীলাম্বর ঘরের ভিতর ঘুমাইতেছিল, পীতাম্বর নিজের কাজে গিয়াছিল, ছোটবৌ বেড়ার ফাঁক দিয়া মৃদুস্বরে ডাকিয়া বলিল, দিদি, অপরাধ নিও না, তোমায় আমি আর বোঝাব কি, কিন্তু দু’দিন ঘরে এলে না কেন?
বিরাজ মৌন হইয়া রহিল।
ছোটবৌ বলিল, ওঁকে বদ্ধ করে রেখো না দিদি, বিপদের দিনে একটিবার বুক বাঁধ, ভগবান দু’দিনে মুখে তুলে চাইবেন।
বিরাজ আস্তে আস্তে বলিল, আমি ত বুক বেঁধেই আছি, ছোটবৌ।
ছোটবৌ একটু জোর দিয়া বলিল, তবে যাও দিদি ওঁকে পুরুষমানুষের মত উপার্জন করতে দাও—আমি বলচি, তোমার প্রতি ভগবান দু’দিনে প্রসন্ন হবেন।
বিরাজ একবার মুখ তুলিল, কি কথা বলিতে গেল, তারপর মুখ হেঁট করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।
ছোটবৌ বলিল, পারবে না যেতে?
এবার বিরাজ মাথা নাড়িয়া বলিল, না। ঘুম ভেঙ্গে উঠে ওঁর মুখ না দেখে আমি একটা দিনও কাটাতে পারব না। যা পারব না ছোটবৌ, সে কাজ আমাকে ব’লো