পাতা:বিরাজ বৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘাতের সঙ্গে সঙ্গেই ‘যাই বলিয়া চোখের পলকে কপাট খালিয়া ফেলিল ৷ অথচ, মহন্ত পাবে সে উঠিয়া বসিতে পারিতেছিল না। ষে করাঘাত করিতেছিল, সে ও-পাড়ার চাষীদের ছেলে । বলিল, মােঠাকরান, দাঠাকুর একটা শকিনো কাপড় চাইলো-দাও । বিরাজ ভাল বঝিতে পারিল না, চৌকাঠে ভর দিয়া কিছদক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া বলিল, কাপড় চাইলেন ? কোথায় তিনি ? ছেলেটি জবাব দিল, গোপাল ঠাকুরের বাপের গতি ক’রে এই সবাই ফিরে qረቐiri ፲ኞ ክ গতি ক’রে ? বিরাজ স্তম্ভিত হইয়া রহিল । গোপাল চক্লবতী তাহদের দরসম্পকীয় জ্ঞাতি। তাহার বদ্ধ পিতা বহদিন যাবৎ রোগে ভগিতেছিলেন, দিন-দই পাবে তাঁহাকে ত্ৰিবেণীতে গঙ্গাযাত্রা করান হইয়াছিল, আজ দ্বিপ্রহরে তিনি মরিয়াছেন, দাহ করিয়া এইমাত্ৰ সকলে ফিরিয়া আসিয়াছে। ছেলেটি সব সংবাদ দিয়া শেষকালে জানাইল, দাঠাকুরের মত এ অঞ্চলে কেউ নাড়ী ধরিতে পারে না, তাই তিনিও সেইদিন হ’তে সঙ্গে ছিলেন । বিরাজ টলিতে টালিতে ভিতরে আসিয়া তাহার হাতে একখানা কাপড় দিয়া, শয্যায় আশ্রয় করিল। * জনপ্রাণীশান্য অন্ধকার ঘরের মধ্যে যাহার সত্ৰী একা, জ্বরে, দশ্চিন্তায়, অনাহারে মতকল্প, সমস্ত জানিয়া শনিয়াও যাহার স্বামী বাহিরে পরোপকার করিতে নিযক্ত, সেই হতভাগিনীর বলিবার, কি কহিবার আর কি বাকী থাকে । আজ তাহার অবসানুষ বিকৃত মস্তিক্ষক তাহাকে বারংবার দঢ়স্বরে বলিয়া দিতে লাগিল,-বিরাজ, সংসারে তোর কেউ নেই। তোর মা নেই, বাপ নেই, ভাই নেই, বোন নেই। - স্বামীও নেই ; আছে শােধ যম । তাঁর কাছে ভিন্ন তোর জড়বার আর দ্বিতীয় স্থান নেই। বাহিরে বমিিটর শব্দে, ঝিল্লীর ডাকে, বাতাসের সর্বননে কেবল নাই-নাই শব্দই তাহার দই কানের মধ্যে নিরস্তুর প্রবেশ করিতে লাগিল ৷ ভাঁড়ারে চাল নাই, গোলায় ধান নাই, বাগানে ফল নাই, পকুরে মাছ নাই-সখি নাই, শান্তি নাই । সর্বাস্থ্য নাই-ও বাড়িতে ছোটবোঁ নাই, সকলের সঙ্গে আর তার স্বামীও নাই। অথচ আশ্চৰ্য এই, কাহারও বিরুদ্ধে বিশেষ কোন ক্ষোভের ভাবও তাহার মনে উঠিল না। এক বৎসর পাবে স্বামীর এই হৃদয়হীনতার শতাংশের একাংশ বোধ করি তাহাকে ক্ৰোধে পাগল করিয়া তুলিত ; কিন্তু, আজ কি-একরকম সত্যন্ধ অবসাদ তাহাকে অসাড় করিয়া আনিতে লাগিল । এমনই নিজীবের মত পড়িয়া থাকিয়া সে কত কি ভাবিয়া দেখিতে চাহিল, ভাবিtাতেও লাগিল, কিন্তু সমস্ত ভাবনাই এলোমেলো । অথচ ইহারই মধ্যে অভ্যাসবিশে হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল-কিন্তু সমস্ত দিন তাঁর খাওয়া হয়নি যে ।