পাতা:বিরাজ বৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

40 विद्वाकांब লোভ আমার সবচেয়ে বড় লোভ,-সেই লোভাটাই আমি কোনমতে ছাড়তে পারছিলাম না-আজ ছাড়লম,-বলিয়া কপাল মাছিতে মাছিতে খিড়কির খোলা দোর দিয় আর একবার অন্ধকারে বাগানের মধ্যে মিলাইয়া গেল । নীলাম্বর কথা কহিতে চাহিল, কিন্তু জিভ নাড়িতে পারিল না। ছটিয়া পিছনে যাইতে চাহিলে, কিন্তু উঠিতে পারিল না। কোন মায়ামস্ত্রে তাহাকে অচল পাথরে রপান্তরিত করিয়া দিয়া বিরাজ অব্দশ্য হইয়া গেল । আজ একবার ওই সরস্বতীর দিকে চাহিয়া দেখ, ভয় করিবে । বৈশাখের সেই শীণকায়া মদ্যপ্রবাহিনী শ্রাবণের শেষ দিনে কি খরবেগে দাই কুল ভাসাইয়া চলিয়াছে। যে কালো পাথরখন্ডটার উপর একদিন বসন্ত-প্ৰভাতে দহটি ভাইবোনকে অসীম স্নেহসাখে এক হইয়া বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছিলাম, সেই কালো পাথরটার উপর বিরাজ আজিকার অাঁধার রাত্রে কি হাদয় লইয়া কপিতে কপিতে আসিয়া দাঁড়াইল । নীচে গভীর জলরাশি সদঢ় প্রাচীর-ভিত্তিতে ধাক্কা খাইয়া আব্বত রচিয়া চলিয়াছে, সেইদিকে একবার ঝকিয়া দেখিয়া সম্মখে চাহিয়া রহিল। তাহার পায়ের নীচে কালো পাথর, মাথার উপর মেঘাচ্ছন্ন কালো আকাশ, সমখে কালো জল, চারিদিকে গভীর কৃষ্ণ স্তব্ধ বনানী-আর বকের ভিতর জাগিতেছে তাদের চেয়ে কালো আত্মহত্যাপ্রবত্তি । সে সেইখানে বসিয়া পড়িয়া নিজের অচল দিয়া দঢ় করিয়া জড়াইয়া নিজের হাত-পা বধিতে লাগিল । द३ প্রত্যুষের আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন, টিপিটিপি জল পড়িতেছিল । নীলাশবর খোলা দরজার চৌকাঠে মাথা রাখিয়া কোন এক সময়ে ঘামাইয়া পড়িয়াছিল । সহসা তাহার সাপ্ত কণে শব্দ আসিল, হাঁ গা, বিরাজবৌমা ! নীলাম্বর ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিলা। হয়ত, শ্যাম নাম শানিয়া এমনই কোন এক বিষরি মেঘাচ্ছন্ন প্ৰভাতে শ্ৰীীরাধা এমনই ব্যাকুল হইয়া উঠিয়া বসিতেন । সে চোখ মাছিতে মাছিতে বাহিরে আসিয়া দেখিল, উঠানে তুলসী ডাকিতেছে। কাল সমস্ত রাত্রি বনে বনে প্রতি বক্ষতলে খাজিয়া খাজিয়া কাঁদিয়া ঘণ্টা-খানেক পাবে শ্ৰান্ত ও ভীত হইয়া ফিরিয়া আসিয়া দোরগোড়ায় বসিয়াছিল, তার পর কখন তুলিয়া बादेब्रा °ख्रिछिन । তুলসী জিজ্ঞাসা করিল, মা কোথায় বাবা ? নীলাম্বর হতবন্ধির মত চাহিয়া থাকিয়া বলিল, তুই তবে কাকে ডাকছিলি ?