খাস না।
কেন খাবে না দিদি?
হরিমতি বলিল, এখনও আমার একটুও ক্ষিদে পায়নি।
নীলাম্বর হাসিয়া বলিল, সে আমি যেন বুঝলুম কিন্তু, যে গাল টিপে দেবে, সে-ই বুঝবে না।
দাসী অলক্ষ্যে থাকিয়া আবার ডাক দিল, পুঁটি!
নীলাম্বর তাহাকে তাড়াতাড়ি তুলিয়া দিয়া বলিল, যা, তুই কাপড় ছেড়ে দুধ খেয়ে আয় বোন আমি বসে আছি।
হরিমতি অপ্রসন্ন মুখে ধীরে ধীরে চলিয়া গেল।
সেই দিন দুপুরবেলা বিরাজ স্বামীকে ভাত বাড়িয়া দিয়া অদূরে বসিয়া পড়িয়া বলিল, আচ্ছা, তুমিই বলে দাও, আমি কি দিয়ে রোজ রোজ তোমার পাতে ভাত দি? তুমি এ খাবে না, ও খাবে না, সে খাবে না—শেষকালে কিনা মাছ পর্যন্ত ছেড়ে দিলে।
নীলাম্বর খাইতে বসিয়া বলিল, এই ত, এত তরকারি হয়েচে!
এত কত। ঐ থোড়-বড়ি-খাড়া, আর খাড়া-বড়ি-থোড়! এ দিয়ে কি পুরুষমানুষ খেতে পারে? এ শহর নয় যে, সব জিনিস পাওয়া যাবে; পাড়াগাঁ, এখানে সম্বলের মধ্যে ঐ পুকুরের মাছ—তাও কিনা তুমি ছেড়ে দিলে? পুঁটি, কোথায় গেলি? বাতাস করবি আয়—সে ত হবে না—আজ যদি একটি ভাত পড়ে থাকে ত তোমার পায়ে মাথা খুঁড়ে মরব।
নীলাম্বর হাসিমুখে নিঃশব্দে আহার করিতে লাগিল।
বিরাজ রাগিয়া বলিল, কি হাস, আমার গা জ্বালা করে। দিন দিন তোমার খাওয়া কমে আসছে—সে খবর রাখ? গলায় হাড় বেরোবার জো হচ্ছে, সেদিকে চেয়ে দেখ।
নীলাম্বর বলিল, দেখেচি, ও তোমার মনের ভুল।
বিরাজ কহিল, মনের ভুল? তুমি গুণে একটি ভাত কম খেলে আমি বলে দিতে পারি, রতি পরিমাণ রোগা হলে গায়ে হাত দিয়ে ধরে দিতে পারি, তা জান? যা ত পুঁটি, পাখা রেখে রান্নাঘর থেকে তোর দাদার দুধ নিয়ে আয়।
হরিমতি একধারে দাঁড়াইয়া বাতাস করিতে শুরু করিয়াছিল, পাখা রাখিয়া দুধ আনিতে গেল।
বিরাজ পুনরায় কহিল ধম্মকম্ম করবার ঢের সময় আছে। আজ ও-বাড়ির পিসিমা এসেছিলেন, শুনে বললেন, এত কম বয়সে মাছ ছেড়ে ছিলে চোখের জ্যোতি কমে যায়, গায়ের জোর কমে যায়—নানা, সে হবে না—শেষকালে কি হতে কি হবে, তোমাকে মাছ ছাড়তে আমি দেব না।