পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলাসী পাকা দুই ক্রোশ পথ হাঁটিয়া স্কুলে বিদ্যা অর্জন করিতে যাই । আমি এক নই-দশ-বারোজন। যাহাঁদেরই বাটী পল্লীগ্রামে, তাহাদের শতকরা আশি জনকে এমনি করিয়া বিদ্যালাভ করিতে হয়। ইহাতে লাভের অঙ্কে শেষ পর্যন্ত একেবারে শূন্য না পড়িলেও, যাহা পড়ে, তাহার হিসাব করিবার পক্ষে এই কয়টা কথা চিন্তা করিয়া দেখিলেই যথেষ্ট হইবে যে, যে ছেলেদের সকাল আটটার মধ্যে বাহির হইয়া যাতায়াতে চার ক্রোশ পথ ভাঙ্গিতে হয়-চার ক্ৰোশ মানে আট মাইল নয়, ঢের বেশী-বর্ষার দিনে মাথার উপর মেঘের জল ও পায়ের নীচে একহঁাটু কাদা এবং গ্রীষ্মের দিনে জলের বদলে কড়া সূৰ্য এবং কাদার বদলে ধূলার সাগর সাতার দিয়া স্কুলে ঘর করিতে হয়, সে দুর্ভাগা বালকদের মা-সরস্বতী খুশী হইয়া বর দিবেন কি, তাহদের যন্ত্রণা দেখিয়া কোথায় যে তিনি মুখ লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না। VK তার পরে এই কৃতবিদ্যা শিশুর দল বড় হইয়া একদিন গ্রামেই বসুন, আর ক্ষুধার জ্বালায় অন্যত্ৰই যান—তাদের চার-ক্রোশ হাঁটা বিদ্যার তেজ আত্মপ্ৰকাশ করিবেই করিবে । কেহ কেহ বলেন। শুনিয়াছি, আচ্ছা, যাদের ক্ষুধার জ্বালা, তাদের কথা না হয় নাই ধরিলাম, কিন্তু যাদের সে জ্বালা নাই, তেমন সব ভদ্রলোকই বা কি গ্ৰাম ছাড়িয়া পলায়ন করেন ? তঁরা বাস করিতে থাকিলে তি পল্লীর এত দুর্দশা হয় না !