পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাতের মেয়ে বলিয়া কিছুতেই মনে হয় না । পরনে গরদের কাপড় স্নানের পর বোধ করি, এইমাত্ৰ আহিব্রুক করিতে বসিয়াছিল, ব্ৰাহ্মণ জল চাহিয়াছে, চাকরের কাছে শুনিয়া সে আহ্নিক ফেলিয়া ছুটিয়া আসিয়াছে। কহিল, আপনাদের কে জল চেয়েছিলেন যে ? বিপিন কহিল, পাটের শাড়ি পরে এলেই বুঝি তোমার হাতে জল খাব আমরা ? অপূর্ব, ইনিই সে বিদ্যোধরী হে! চক্ষের নিমিষে মেয়েটির হাত হইতে বাতাসার রেকবাটা ঝনাৎ করিয়া নীচে পড়িয়া গেল এবং সেই অসীম লজ্জা চোখে দেখিয়া অপূর্ব নিজেই লজ্জায় মরিয়া গেল। সক্রোধে বিপিনকে একটা কনুইয়ের গুতো মারিয়া কহিল, এ-সব কি বঁদেরামি হচ্ছে ? কাণ্ডজ্ঞান নেই ? বিপিন পাড়ার্গায়ের মানুষ, কলহের মুখে অপমান করিতে নরনারী-ভেদাভেদজ্ঞান-বিবর্জিত নিরপেক্ষ বীরপুরুষ। সে অপূৰ্বর খোঁচা খাইয়া আরও নিষ্ঠুর হইয়া উঠিল। চােখ রাঙ্গাইয়া হাকিয়া কহিল, কেন, মিছে কথা বলচি নাকি ? ওর এতবড় সাহস যে, বামুনের ছেলের জন্য জল আনে ? আমি হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিতে পারি জান ? অপূর্ব বুঝিল আর তর্ক নয়। অপমানের মাত্রা তাহাতে বাড়িবে বৈ কমিবে না। কহিল, আমি আনতে বলেছিলুম। বিপিন, তুমি না জেনে অনর্থক ঝগড়া ক’রো না । চল, আমরা এখন যাই । গৌরী রেকাবিটা কুড়াইয়া লইয়া, কাহারও প্রতি দৃষ্টিপাত না করিয়া নিঃশব্দে দরজার আড়ালে গিয়া দাড়াইল । তথা হইতে কহিল, দাদা, এরা যে কিসের চাঁদা নিতে এসেছিলেন, তুমি দিয়েচ ? একাদশী, এতক্ষণ পৰ্যন্ত বিহবিলের ন্যায় বসিয়া ছিল, ভগিনীর আহবানে চকিত হইয়া বলিল, না, এই যে দিই দিদি । অপূৰ্বর প্রতি চাহিয়া হাতজোড় করিয়া কহিল, বাবুমশাই, আমি গরীব মানুষ। চার আনাই আমার পক্ষে ঢের, দয়া করে নিন। বিপিন পুনরায় কি একটা কড়া জবাব দিতে উদ্যত হইয়াছিল, বিলাসী-৩ s