পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্লাসে উঠিয়াছিল, এ খবর আমরা কেহই জানিতাম না-সম্ভবতঃ তাহা প্ৰত্নতাত্ত্বিকের গবেষণার বিষয়-আমরা কিন্তু তাহার ঐ থার্ড ক্লাশটাই চিরদিন দেখিয়া আসিয়াছি। তাহার ফোর্থ ক্লাশে পড়ার ইতিহাসও কখনো শুনি নাই, সেকেণ্ড ক্লাসে উঠার খবরও কখনো পাই নাই। মৃত্যুঞ্জয়ের বাপ-মা ভাই-বোন কেহই ছিল না ; ছিল শুধু গ্রামের এক প্রান্তে একটা প্ৰকাণ্ড আম-কঁঠালের বাগান, আর তার মধ্যে একটা পোড়ো-বাড়ি, আর ছিল এক জ্ঞাতি খড়ে। খুড়োর কাজ ছিল ভাইপোর নানাবিধ দুর্নােম রটনা করা-সে। গাজা খায়, সে গুলি খায়, এমনি আরও কত কি ! তঁার আর একটা কাজ ছিল বলিয়া বেড়ানো,-ঐ বাগানের অধোকটা তঁর নিজের অংশ, নালিশ করিয়া ’ দখল করার অপেক্ষা মাত্র । অবশ্য দখল একদিন তিনি পাইয়াছিলেন বটে, কিন্তু সে জেলা-আদালতে নালিশ করিয়া নয়-উপরের আদালতের হুকুমে। কিন্তু সে কথা পরে হইবে । মৃত্যুঞ্জয় নিজে রাধিয়া খাইত এবং আমের দিনে ঐ আমবাগানটা জমা দিয়াই তাহার সারা বৎসরের খাওয়া-পরা চলিত এবং ভাল করিয়াই চলিত । যেদিন দেখা হইয়াছে, সেই দিনই দেখিয়াছি মৃত্যুঞ্জয় হেঁড়া-খোড়া মলিন বইগুলি বগলে করিয়া পথের এক ধারা দিয়া নীরবে চলিয়াছে। তাহাকে কখনো কাহারও সহিত যাচিয়া আলাপ করিতে দেখি নাই-বরঞ্চ উপযাচক হইয়া কথা কহিতাম। আমরাই। তাহার প্রধান কারণ ছিল এই যে, দোকানের খাবার কিনিয়া খাওয়াইতে গ্রামের মধ্যে তাহার জোড়া ছিল না। আর শুধু ছেলেরাই নয়। কত ছেলের বাপ কতবার যে গোপনে ছেলেকে দিয়া তাহার কাছে স্কুলের মাহিনী হারাইয়া গেছে, বই চুরি গেছে ইত্যাদি বলিয়া টাকা আদায় করিয়া লইত তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু ঋণ স্বীকার করা ত দূরের কথা, ছেলে তাহার