পাতা:বিশ্বকোষ অষ্টাদশ খণ্ড.djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a বাগল সাহিত্য (শাক্তপ্রভাব) [ ৪৬ ] বাঙ্গাল সাহিত্য (শক্তিপ্রভাব) প্রপিতামহ গীতাৰয়, বৃদ্ধপ্রপিতামহ মনোহয়, প্রপিতামহ চিয়ঞ্জীব, পিতামহ হরিহর, পিতা রাধাকাঙ্ক এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাত চৈতন্তের সাম করিয়াছেন। আর একটী বিশেষ পরিচয় দিয়াছেন যে, রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ শ্রেণীর ভরদ্বাজ গোত্রে কাটাদিয়ার ডিত্তিসাঞি বংশে কবি নিতানন্দ জন্মগ্রহণ করেন ; এরূপ স্থলে তাহাকে কখনই উৎকল ব্রাহ্মণ বলিয়াঞ্চন হয় না। বিশেষতঃ গোকুল পালার একস্থানে কৰি প্রকাশ করিয়াছেন, যে তিনি হলধর সিংহ কর্তৃক গঙ্গাতীরে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। এরূপ স্থলে নিত্যানন্দ যে বাঙ্গালী কবি ও তাহার গ্রন্থ যে বাঙ্গালার প্রচলিত ছিল, উৎকল হইতে আনিতে হয় নাই, তাহাতে আর সন্দেহ থাকিতেছে না । বিরাট পালার শেষে কবি একটা অষ্টমঙ্গলা লিথিয়াছেন, তাহা হইতে জানিতে পারি যে তাহার বৃহৎ শীতলা-মঙ্গল ৮ট পালায় বিভক্ত-তন্মধ্যে ১ম স্থাপনা বা স্বৰ্গপালা, এই পালায় শচীমুখে শীতলানিন্দ উপলক্ষে স্বৰ্গে পূজা প্রচার। ২র পাতাল পালা অর্থাৎ বরণ কর্তৃক পাতালে পূজাপ্রচার। ৩য় লঙ্কাপালা— লঙ্কায় রাবণ কর্তৃক পূজা প্রচার। ৪র্থ কিষ্কিন্ধ্যাপালা-বানররাজ বালী কর্তৃক কিষ্কিন্ধ্যায় পূজাপ্রচার। ৫ম অযোধ্যাপালা— অযোধ্যায় দশরথ কর্তৃক পূজাগ্রচার ৬ষ্ঠ মথুরামগধপালা— কংস ও জরাসদ্ধ কর্তৃক পূজাপ্রচার। ৭ম গোকুলপালা— গোকুলে ননাকর্তৃক পূজা প্রচার এবং দিবোদাস বা দেবদাস কর্তৃক টীকাগ্রকাশ। ৮ম বিরাটপাল-বিরাট রাজ্যে রত্নাবতী কর্তৃক উত্তরের প্রাণদান, রঙ্গজ সফরে দেবদত্ত কর্তৃক হেমঘট উদ্ধার, হেমঘটপূজা, দেবদত্ত ও তাহার স্ত্রীর স্বৰ্গারোহণ। দৈবকীনন্দনের শীতলা যেমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিবভক্ত চন্দ্রকেতুকে অশেষ কষ্ট দিয়া অবশেষে কোন ক্রমে নিজ পূজা স্বীকার কয়াইয়াছেন, নিত্যানন্দের বর্ণিত নিমাইজগাতি, দেবদত্ত, বিরাটরাজ প্রভৃতি শিবভক্ত সেইরূপ প্রথমে শিবপুজা ছাড়িয়া শীতলা পূজা করিতে অস্বীকৃত হইয়। অবশেষে দেবীপূজা করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। কেবল শিবভক্ত বলিয়া নহে, নিত্যানমা বিষ্ণুভক্তদিগকেও ছাড়েন নাই। গোকুলপালায় কবি দেখাইয়াছেন যে বিষ্ণুভক্তগণও শীতলার ভয়ে তাহার পূজা করিতে অগ্রসর হইয়াছিলেন। কবি কৃষ্ণরাম, রামপ্রসাদ এবং শঙ্করাচাৰ্য্যও ঐ সকল পালা লষ্টয়াই স্ব স্ব শীতলামঙ্গল রচনা করিয়াছেন। উক্ত সকল কবির মধ্যে কবি কৃষ্ণরামের রচনা প্রাঞ্জল, মনোহর ও কবিত্বপূর্ণ। কৃষ্ণরামের মানদাসের পালা অতি অভিনব। ঘাহা হউক, শতলামঙ্গলের পালাগুলি হিন্দুকবির হাতে বহু রূপান্তরিত হইলেণ্ড ঐ সকল গ্রন্থ মধ্যে সুদূর অতীতের স্বীপস্থতি জঙ্কিত রছিস্বাছে, সেই অস্পষ্ট চিত্ৰটী ৰৌদ্ধ শাক্ত-সমাজের শেষ নিদর্শল । TTT মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীমহাশয় নেপালে গিয়া দেখিয়া আসিয়াছেন, তথায় যেখানে যেখানে তন্ত্রোক্ত লোকেশ্বরাদির দেবালয় আছে, সেই সেই স্থলে হারাতী দেবীর অবস্থান। বৌদ্ধ হারতীও এখানকার শীতলার স্তায় বসন্ত-ব্ৰণব্যাধিনাশিনী। বঙ্গদেশের সর্বত্রই যেখানে যেখানে ধৰ্ম্মমন্দির আছে, সেই সেই স্থলেই যেন শীতলার অবস্থান স্বতঃসিদ্ধ। সাধারণতঃ ধৰ্ম্মপণ্ডিত বা ডোমপণ্ডিতগণ শীতলার পুজা করিয়া থাকেন। অদ্যাবধি তাঁহার বসন্তরোগচিকিৎসায় সিদ্ধহস্ত বলিয়া প্রথিত । ধৰ্ম্মমঙ্গলপ্রসঙ্গে ধৰ্ম্মপণ্ডিতদিগের প্রভাবের পরিচয় দিয়াছি। তাছাদের প্রভাব খৰ্ব্ব হইলে তাহার বৌদ্ধতান্তিক দেবী হারীতীকে শীতলামূৰ্ত্তিতে হিন্দু সমাজে হাজির করিয়াছিলেন। হিন্দুসমাজে শীতলাপুজা চালাইতে তাহাদিগকে কিছু বেগ পাইতে হইয়াছিল। অবশেষে বঙ্গে কবি নিত্যানদের বসন্তকুমারী অনুগ্রহবিস্তারের সহিত অনিচ্ছাসত্ত্বেও শৈব ও বৈষ্ণবগণ রোগপ্রশমনার্থ শীতলার পূজা করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। যে ধৰ্ম্মপণ্ডিতগণ হিন্দুসমাজের বাহিরে পড়িয়ছিলেন, হিন্দুসমাজে শীতলাপুজা প্রচারের সঙ্গে তাহার কতকটা বিলুপ্ত সন্মান লাভ করিলেন। অন্ত সময়ে হিন্দু সাধারণ তাহাদিগকে ঘৃণার চক্ষে দর্শন করিলেও শীতলাপুজার সময়ে তাহার হিন্দুগৃহে আবালবৃদ্ধবনিতার নিকট ভক্তিশ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়া থাকেন। শীতলাপুজাপ্রচারের সহিত শীতলাপুজক ধৰ্ম্মপণ্ডিতগণ শীতলাপণ্ডিত’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। শীতলাপণ্ডিতদিগের পূজিতা শীতলপ্রতিমা ভাবপ্রকাশ বা পিচ্ছিলাতন্ত্রোক্ত দেবীমূর্তাি নহে, শীতলপণ্ডিতদিগের শীতল করচরণহীন সিন্মুরলিপ্তাঙ্গ, শঙ্খ বা ধাতুখচিত ত্রণচিহ্নাঙ্কিত মুখমাত্রাবশিষ্ট প্রতিমা । ধৰ্ম্মঠাকুরের গাত্রে যেমন পিতলের টোপ-তোলা পেরেকের মত ' প্রোথিত প্ৰাছে, শীতলার মুখেও সেইরূপ পম বা ধাতুনিৰ্ম্মিত রুইতনের আকার বা পেরেকের মাথায় টোপ-তোলা বসন্ত চিহ্ন দেখা যায়। নেপালের বৌদ্ধ হারীতীর মূৰ্ত্তিও ঐরূপ। শৈবপ্রভাবের মধ্যেই শীতলাপুজা প্রচারিত হইয়াছিল,শীতলাপণ্ডিতগণই বসন্তরোগপ্রশমনার্থ হিন্দু সমাজে টীকাদার হইল ও এক মাত্র বসন্তচিকিৎসক বলির খ্যাতি লাভ করিল। হিন্দু জমিদারগণ র্তাহাদের নিকট উপকৃত হইয়া দেীর উদ্দেন্তে দেবোত্তর দান করিতে লাগিলেন। শীতলাপুজায় কিছু স্ববিধ দেখিয়া হীনাৰস্থায় পতিত ব্ৰাহ্ম-ৰাজকেরাও শীতলা দেবীর পূজার অগ্রসর হইলেন, সেই সঙ্গে তাহারা পুরাণ ও তন্ত্র খুজিয়া শীতলার রূপ ও পূজা বাছির করলেন। এই সময়েই হিন্দু ব্রাহ্মণ শীতলা-মাছাস্থ্য প্রচারার্থ পূৰ্ব্বাদশ লইয়া হিন্দুসমাজের উপযোগ শীতলামঙ্গল রচনা আরম্ভ করিলেন। কোন কোন ব্রাহ্মণ