পাতা:বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-চতুর্থ সংস্করণ.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२ বিশ্ব-পরিচয় চারদিকে আলোর পর্দা টাঙিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীকে ছাড়িয়ে জগতে আর যে কিছু আছে তা দেখতে দিচ্ছে না। কিন্তু দিন শেষ হয়, সূর্য অস্ত যায়, আলোর ঢাকা যায় সরে ; তখন অন্ধকার ছেয়ে বেরিয়ে পড়ে অসংখ্য নক্ষত্র। বুঝতে পারি জগৎটার সীমানা পৃথিবী ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। কিন্তু কতটা যে দূরে তা কেবল অনুভূতিতে ধরতে পারিনে । সেই দূরত্বের সঙ্গে আমাদের একমাত্র যোগ চোখের দেখা দিয়ে। সেখান থেকে শব্দ আসে না, কেননা শব্দের বোধ হাওয়ার থেকে । এই হাওয়া চাদরের মতোই পুথিবীকে জড়িয়ে আছে। এই হাওয়া পৃথিবীর মধ্যেই শব্দ জাগায়, এবং শব্দের ঢেউ চালাচালি করে । পুথিবীর বাইরে ভ্ৰাণ আর স্বাদের কোনো অর্থই নেই। আমাদের স্পৰ্শবোধের সঙ্গে আমাদের অার একটা বোধ আছে ঠাণ্ড গরমের বোধ । পৃথিবীর বাইরের সঙ্গে আমাদের এই বোধটার অন্তত এক জায়গায় খুবই যোগ আছে। সূর্ষের থেকে রোদুর আসে, রোদুর থেকে পাই গরম। সেই গরমে আমাদের প্রাণ। সূর্যের চেয়ে লক্ষগুণ-গরম নক্ষত্র আছে।. তার তাপ আমাদের বোধে পৌছয় না। কিন্তু সূর্যকে তে৷ আমাদের পর বলা যায় না । অন্ত যে সব অসংখ্য নক্ষত্র নিয়ে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, সূর্য তাদের মধ্যে সকলের চেয়ে আমাদের আত্মীয়। তবু মানতে হবে, সূর্য পৃথিবীর থেকে আছে দূরে । কম দূরে নয়, ন কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল তার দূরত্ব।