পাতা:বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিশ্বপরিচয়

দৌড়ের সঙ্গেই সে পাল্লা দেবার স্পর্ধা রাখে। সে এই প্রকাণ্ড জগতের প্রকাণ্ড মাপের খবর জানতে বেরল, অনুভূতির ছেলে-ভুলােনো গুজব দিলে বাতিল ক’রে। ন কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইলকে আমরা কোনােমতেই অনুভব করতে পারিনে, কিন্তু বুদ্ধি হার মানলে না, হিসেব কষতে বসল।

 বাইরের বিশ্বলােকটার কথা থাক্‌, আমরা যে-পৃথিবীতে আছি, তার চেয়ে কাছে তাে আর কিছুই নেই, তবু এর সমস্তটাকে এক ক’রে দেখা আমাদের বােধের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু একটি ছােটো গ্লোবে যদি তার ম্যাপ আঁকা দেখি, তাহলে পৃথিবীর সমগ্রটাকে জানার একটুখানি গােড়াপত্তন হয়। আয়তন হিসাবে গ্লোবটি পৃথিবীর অনেক হাজার ভাগের একভাগ মাত্র। আমাদের অন্য সব বােধ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র দৃষ্টিবােধের আঁচড়-কাটা পরিচয় এতে আছে। বিস্তারিত বিবরণ হিসাবে এ একেবারে ফাঁকা। বেশি দেখবার শক্তি আমাদের নেই ব’লেই ছােটো করেই দেখাতে হােলাে।

 প্রতিরাত্রে বিশ্বকে এই যে ছােটো করেই দেখানাে হয়েছে সেও আমাদের মাথার উপরকার আকাশের গ্লোবে। দৃষ্টিবােধ ছাড়া অন্য কোনাে বােধ এর মধ্যে জায়গা পায় না। যা চিন্তা করতে মন অভিভূত হয়ে যায় এত বড়ো জিনিসকে দিকসীমানায় বদ্ধ এই আকাশটুকুর মধ্যে আমাদের কাছে ধরা হলাে।