পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰাত্রিংশত্তম পরিচ্ছেদ : বিষবৃক্ষের ফল »ላ তাহার অপনোদন বস্তু কঠিন। মনের অনেকগুলি ভাব আছে, তাছার সকলকেই লোকে ভালবাসা বলে। কিন্তু চিত্তের যে অবস্থায়, অস্তের মুখের জন্য আমরা আত্মমুখ বিসর্জন করিতে স্বতঃ প্রস্তুত হই, তাহাকে প্রকৃত ভালবাসা বলা যায়। “স্বতঃ প্রস্তুত হই, অর্থাৎ ধৰ্ম্মজ্ঞান বা পুণ্যাকাঙ্ক্ষায় নহে। সুতরাং রূপবতীর রূপভোগলালসা, ভালবাসা নহে। যেমন ক্ষুধাতুরের ক্ষুধাকে অল্পের প্রতি প্রণয় বলিতে পারি না, তেমনি কামাতুরের চিত্তচাঞ্চল্যকে রূপবতীর প্রতি ভালবাস৷ বলিতে পারি না। সেই চিত্তচাঞ্চল্যকেই আৰ্য্যকবিরা মদনশরজ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। যে বৃত্তির কল্পিত অবতার বসন্তসহায় হইয়া, মহাদেবের ধ্যান ভঙ্গ করিতে গিয়াছিলেন, র্যাহার প্রসাদে কবির বর্ণনায় মৃগের মৃগীদিগের গাত্রে গাত্ৰকণ্ডুয়ন করিতেছে, করিগণ করিণীদিগকে পদ্মমৃণাল ভাঙ্গিয়া দিতেছে, সে এই রূপজ মোহমাত্র। এ বৃত্তিও জগদীশ্বরপ্রেরিতা ; ইহা দ্বারাও সংসারের ইষ্টসাধন হইয়া থাকে, এবং ইহা সৰ্ব্বজীবমুগ্ধকরী। কালিদাস, বাইরণ, জয়দেব ইহার কবি – বিদ্যাসুন্দর ইহার ভেঙ্গান। কিন্তু ইহা প্রণয় নহে। প্রেম বুদ্ধিবৃত্তিমূলক। প্রণয়াস্পদ ব্যক্তির গুণ সকল যখন বুদ্ধিবৃত্তিদ্বারা পরিগৃহীত হয়, হৃদয় সেই সকল গুণে মুগ্ধ. হইয়া তৎপ্রতি সমাকৃষ্ট এবং সঞ্চালিত হয়, তখন সেই গুণাধারের সংসৰ্গলিপা, এবং তৎপ্রতি ভক্তি জন্মে। ইহার ফল, সহৃদয়ত, এবং পরিণামে আত্মবিস্মৃতি ও আত্মবিসর্জন । এই যথার্থ প্রণয় ; সেক্ষপীয়র, বাল্মীকি, শ্ৰীমদ্ভাগবতকার ইহার কবি। ইহা রূপে জন্মে না। প্রথমে বুদ্ধিদ্বারা গুণগ্রহণ, গুণগ্রহণের পর আসঙ্গলিঙ্গা ; আসঙ্গলিপ্সা সফল হইলে সংসর্গ, সংসৰ্গফলে প্রণয়, প্রণয়ে আত্মবিসর্জন। আমি ইহাকেই ভালবাসা বলি। নিতান্ত পক্ষে স্ত্রীপুরুষের ভালবাসা, আমার বিবেচনায় এইরূপ। আমার বোধ হয়, অন্ত ভালবাসারও মূল এইরূপ ; তবে স্নেহ এক কারণে উপস্থিত হয় না। কিন্তু সকল কারণই বুদ্ধিবৃত্তিমূলক। নিতান্ত পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিমূলক কারণজাত স্নেহ ভিন্ন স্থায়ী হয় না। রূপজ মোহ তাহা নহে। রূপদৰ্শনজনিত যে সকল চিত্তবিকৃতি, তাহার তীক্ষত পৌনঃপুন্তে হ্রস্ব হয়। অর্থাৎ পৌনঃপুন্তে পরিতৃপ্তি জন্মে। গুণজনিতের পরিতৃপ্তি নাই। কেন না, রূপ এক—প্রত্যহই তাহার এক প্রকারই বিকাশ, গুণ নিত্য নূতন নূতন ক্রিয়ায় নূতন নূতন হইয়া প্রকাশ পায়। রূপেও প্রণয় জন্মে, গুণেও প্রণয় জন্মে—কেন না, উভয়ের দ্বারা আসঙ্গলিঙ্গ জন্মে। যদি উভয় একত্রিত হয়, তবে প্রণয় শীঘ্র জন্মে ; কিন্তু একবার প্রণয়সংসর্গ ফল বদ্ধমূল হইলে, রূপ থাকা না থাকা সমান। রূপবান ও কুৎসিতের প্রতি স্নেহ ইহার নিত্য উদাহরণস্থল। \లి