পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Yeş बेिरुबूझ আর একবার বিদ্যুতের অপেক্ষা করিলেন । দ্বিতীয় বার বিহাতে স্থির করিলেন, মনুষ্ক বটে। তখন পথিক ডাকিয়া বলিলেন, “কে তুমি পথে পড়িয়া আছ ?” কেহ কোন উত্তর দিলেন না। আবার জিজ্ঞাসা করিলেন—এবার অফুট কাতরোক্তি আবার মুহূৰ্বজন্য কর্ণে প্রবেশ করিল। তখন ব্রহ্মচারী ছত্র, তৈজস ভূতলে রাখিয়া, সেই স্থান লক্ষ্য করিয়া ইতস্ততঃ হস্তপ্রসারণ করিতে লাগিলেন। অচিরাং কোমল মনুষ্যদেহে করম্পর্শ হইল। “কে গা তুমি ?” শিরোদেশে হাত দিয়া কবরী স্পর্শ করিলেন। “হুর্গে। এ যে স্ত্রীলোক ৷” তখন ব্রহ্মচারী উত্তরের প্রতীক্ষা না করিয়া মুমূর্যু অথবা অচেতন স্ত্রীলোকটিকে, দুই হস্ত দ্বারা কোলে তুলিলেন। ছত্র তৈজস পথে পড়িয়া রহিল। ব্রহ্মচারী পথ ত্যাগ করিয়া সেই অন্ধকারে মাঠ ভাঙ্গিয়া গ্রামাভিমুখে চলিলেন। ব্রহ্মচারী এ প্রদেশের পথ ঘাট গ্রাম বিলক্ষণ জানিতেন। শরীর বলিষ্ঠ নহে, তথাপি শিশুসন্তানবৎ সেই মরণোন্মুখীকে কোলে করিয়া এই দুর্গম পথ ভাঙ্গিয়া চলিলেন । যাহারা পরোপকারী, পরপ্রেমে বলবান, তাহারা কখনও শারীরিক বলের অভাব জানিতে পারে না । গ্রামের প্রান্তভাগে ব্রহ্মচারী এক পর্ণকুটীর প্রাপ্ত হইলেন। নিঃসজ্ঞ স্ত্রীলোককে ক্রোড়ে লইয়া সেই কুটীরের দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন। ডাকিলেন, “বাছা হর, ঘরে আছ গ৷ ” কুটারমধ্য হইতে একজন স্ত্রীলোক কহিল, “এ যে ঠাকুরের গলা শুনিতে পাই। ঠাকুর কবে এলেন ?” ব্ৰহ্মচারী। এই আসছি। শীঘ্র দ্বার খোল—আমি বড় বিপদগ্ৰস্ত । হরমণি কুটীরের দ্বার মোচন করিল। ব্রহ্মচারী তখন তাহাকে প্রদীপ জ্বলিতে বলিয়া দিয়া, আস্তে আস্তে স্ত্রীলোকটিকে গৃহমধ্যে মাটির উপর শোয়াইলেন। হর দীপ জালিত করিল, তাহ মুমূর্যুর মুখের কাছে আনিয়া উভয়ে তাহাকে বিশেষ করিয়া দেখিলেন । দেখিলেন, স্ত্রীলোকটি প্রাচীন নহে। কিন্তু এখন তাহার শরীরের যেরূপ অবস্থা, তাহাতে তাহার বয়স অনুভব করা যায় না। তাহার শরীর অত্যন্ত শীর্ণ—সাংঘাতিক পীড়ার লক্ষণযুক্ত। সময়বিশেষে তাহার সৌন্দৰ্য্য ছিল—এমত হইলেও হইতে পারে ; কিন্তু এখন সৌন্দৰ্য্য কিছুমাত্র নাই। আর্দ্র বস্ত্র অত্যন্ত মলিন –এবং শত স্থানে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। আলুলায়িত আৰ্দ্ৰ কেশ চিরকক্ষ। চক্ষু কোটরপ্রবিষ্ট। এখন সে চক্ষু নিমীলিত। নিশ্বাস বহিতেছে—কিন্তু সংজ্ঞা নাই। বোধ হইল যেন মৃত্যু নিকট।