পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তত্রিংশত্তম পরিচ্ছেদ : সূৰ্য্যমুখীর সংবাদ }}} তখন আবার দেবেন্দ্র প্রথমবসস্তুপ্রেরিত একমাত্র ভ্রমরঝঙ্কারবৎ গুৰু গুৰু স্বরে, সঙ্গীতোষ্টম করিলেন। হীরা তুৰ্দ্দমনীয় প্রণয়ফুৰ্ত্তিপ্রযুক্ত সেই মুরের সঙ্গে আপনার কামিনীমুলভ কলকণ্ঠধবনি মিলাইতে লাগিল। দেবেন্দ্র হীরাকে গায়িতে অনুরোধ করিলেন। তখন হীরা প্রেমার্ক্সচিত্তে, মুরারাগরঞ্জিত কমলনেত্র বিস্ফারিত করিয়া, চিত্রিতবৎ জযুগবিলাসে মুখমণ্ডল প্রফুল্ল করিয়া প্ৰফুটম্বরে সঙ্গীতারম্ভ করিল। চিত্তস্ফূৰ্ত্তিবশতঃ তাহার কণ্ঠে উচ্চ স্বর উঠিল। হীরা যাহা গায়িল, তাহ প্রেমবাক্য—প্রেমভিক্ষায় পরিপূর্ণ। তখন সেই পাপমণ্ডপে বসিয়া পাপান্তঃকরণ দুই জনে, পাপাভিলাষবশীভূত হইয়৷ চিরপাপরূপ চিরপ্রেম পরস্পরের নিকট প্রতিশ্রুত হইল। হীরা চিত্ত সংযম করিতে জানিত, কিন্তু তাহাতে তাহার প্রবৃত্তি ছিল না বলিয়া, সহজে পতঙ্গবৎ বহ্নিমুখে প্রবেশ করিল। দেবেন্দ্রকে অপ্রণয়ী জানিয়া চিত্তসংযমে প্রবৃত্তি হইয়াছিল, তাহাও অল্পদুরমাত্র ; কিন্তু যত দূর অভিলাষ করিয়াছিল, তত দূর কৃতকাৰ্য্য হইয়াছিল। দেবেন্দ্রকে অস্কাগত প্রাপ্ত হইয়া, হাসিতে হাসিতে তাহার কাছে প্রেম স্বীকার করিয়াও, অবলীলাক্রমে তাহাকে বিমুখ করিয়াছিল। আবার সেই পুষ্পগত কাটামুরূপ হৃদয়বেধকারী অনুরাগকে কেবল পরগৃহে কাৰ্য্য উপলক্ষ করিয়া শমিত করিয়াছিল। কিন্তু যখন তাহার বিবেচনা হইল যে, দেবেন্দ্র প্রণয়শালী, তখন আর তাহার চিত্তদমনে প্রবৃত্তি রহিল না । এই অপ্রবৃত্তি হেতু বিষবৃক্ষে তাহার ভোগ্য ফল ফলিল । লোকে বলে, ইহলোকে পাপের দণ্ড দেখা যায় না । ইহা সত্য হউক বা না হউক— তুমি দেখিবে না যে, চিত্তসংযমে অপ্রবৃত্ত অব্যক্তি ইহলোকে বিষবৃক্ষের ফলভোগ করিল না। সপ্তত্রিংশত্তম পরিচ্ছেদ স্বৰ্য্যমুখীর সংবাদ বর্ষা গেল। শরৎকাল আসিল । শুরৎকালও যায়। মাঠের জল শুকাইল। ধান সকল ফুলিয়া উঠিতেছে। পুষ্করিণীর পদ্ম ফুরাইয়া আসিল। প্রাতঃকালে বৃক্ষপল্লব হইতে শিশির ঝরিতে থাকে। সন্ধ্যাকালে মাঠে মাঠে ধূমাকার হয়। এমতকালে কাৰ্ত্তিক মাসের এক দিন প্রাতঃকালে মধুপুরের রাস্তার উপরে একখানি পান্ধী আসিল । পল্লীগ্রামে পান্ধী দেখিয়া দেশের ছেলে, খেলা ফেলে পান্ধীর ধারে কাতার দিয়া দাড়াইল । গ্রামের