পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ বিষবৃক্ষ ঝি বউ মাগী ছাগী জলের কলসী কঁাকে নিয়া একটু তফাৎ দাড়াইল—কাকের কলসী কাকেই রচিল—অবাক হইয়া পক্ষী দেখিতে লাগিল। বউগুলি ঘোমটার ভিতর হইতে চোখ বাহির করিয়া দেখিতে লাগিল—আর আর স্ত্রীলোকের ফেল ফেল করিয়া চাহিয়া রহিল । চাষার কাৰ্ত্তিক মাসে ধান কাটিতেছিল—ধান ফেলিয়া, হাতে কাস্তে, মাথায় পাগড়ী, ই করিয়া পান্ধী দেখিতে লাগিল । গ্রামের মণ্ডল মাতববরলোকে অমনি কমিটিতে বসিয়া গেল। পান্ধীর ভিতর হইতে একটা বুটওয়াল পা বাহির হইয়াছিল। সকলেই সিদ্ধান্ত করিল, সাহেব আসিয়াছে—ছেলেরা ধ্রুব জানিত, বে। আসিয়াছে। পান্ধীর ভিতর হইতে নগেন্দ্রনাথ বাহির হইলেন । আমনি তাহাকে পাচ সাত জনে সেলাম করিল—কেন না, তাহার পেণ্টলুন পর, টুপি মাথায় ছিল। কেহ ভাবিল, দারোগা ; কেহ ভাবিল, বরকন্দাজ সাহেব আসিয়াছেন । দর্শকদিগের মধ্যে প্রাচীন এক ব্যক্তিকে সম্বোধন করিয়া নগেন্দ্র শিবপ্রসাদ ব্রহ্মচারীর সংবাদ জিজ্ঞাসা করিলেন। জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি নিশ্চিত জানিত, এখনই কোন খুনি মামলার সুরতহাল হইবে—অতএব সত্য উত্তর দেওয়া ভাল নয়। সে বলিল, “আজ্ঞে, আমি মশাই ছেলে মানুষ, আমি অত জানি ন৷ ” নগেন্দ্র দেখিলেন, এক জন ভদ্রলোকের সাক্ষাং না পাইলে কাৰ্য্যসিদ্ধি হইবে না । গ্রামে অনেক ভদ্র লোকের বসতিও ছিল । নগেন্দ্রনাথ তখন এক জন বিশিষ্টলোকের বাড়ীতে গেলেন। সে গৃহের স্বামী রামকৃষ্ণ রায় কবিরাজ । রামকৃষ্ণ রায়, এক জন বাবু আসিয়াছেন দেখিয়া, যত্ন করিয়া একখানি চেয়ারের উপর নগেন্দ্রকে বসাইলেন । নগেন্দ্র ব্রহ্মচারীর সংবাদ তাহার নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন। রামকৃষ্ণ রায় বলিলেন, “ব্রহ্মচারী ঠাকুর এখানে নাই ।” নগেন্দ্র বড় বিষন্ন হইলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “তিনি কোথায় গিয়াছেন r উত্তর । তাহা বলিয়া যান নাই। কোথায় গিয়াছেন, তাহ আমরা জানি না । বিশেষ তিনি এক স্থানে স্থায়ী নহেন ; সৰ্ব্বদা নানা স্থানে পৰ্য্যটন করিয়৷ বেড়ান। নগেন্দ্র । কবে আসিবেন, তাহ কেহ জানে ? রামকৃষ্ণ । তাহার কাছে আমার নিজেরও কিছু আবশুক আছে। এজন্য আমি সে কথারও তদন্তু করিয়াছিলাম । কিন্তু তিনি যে কবে আসিবেন, তাহ কেহ বলিতে পারে না । নগেন্দ্র বড় বিষঃ হইলেন । পুনশ্চ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কত দিন এখান হইতে গিয়াছেন ?”