পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ্ধ * সব ফুরাইল, যন্ত্রণা ফুরায় না রাত্রি প্রহরেকের সময়ে শ্ৰীশচন্দ্র একাকী বৈঠকখানায় বসিয়া আছেন, এমত সময়— পদব্ৰজে নগেন্দ্র সেইখানে উপস্থিত হইয়া, স্বহস্তবাহিত কান্‌বাস ব্যাগ, দূরে নিক্ষিপ্ত করিলেন। ব্যাগ, রাখিয়া নীরবে একখান চেয়ারের উপর বসিলেন। শ্ৰীশচন্দ্র ৰ্তাহার ক্লিষ্ট, মলিন, মুখকাস্তি দেখিয়া ভীত হইলেন ; কি জিজ্ঞাসা করিবেন, কিছু বুঝিতে পারিলেন না। শ্ৰীশচন্দ্র জানিতেন যে, কাশীতে নগেন্দ্র ব্রহ্মচারীর পত্র পাইয়াছিলেন এবং পত্র পাইয়া, মধুপুর যাত্রা করিয়াছিলেন। এ সকল কথা শ্ৰীশচন্দ্রকে লিখিয়া নগেন্দ্র কাশী হইতে যাত্রা করিয়াছিলেন। এখন নগেন্দ্র আপনা হইতে কোন কথা বলিলেন না দেখিয়া, শ্ৰীশচন্দ্র নগেন্দ্রের নিকট গিয়া বসিলেন এবং তাহার হস্তধারণ করিয়া কহিলেন, “ভাই নগেন্দ্র, তোমাকে নীরব দেখিয়া আমি বড় ব্যস্ত হইয়াছি। তুমি মধুপুর যাও নাই ?” নগেন্দ্র এই মাত্র বলিলেন, “গিয়াছিলাম !” শ্ৰীশচন্দ্র ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ব্রহ্মচারীর সাক্ষাৎ পাও নাই ?” নগেন্দ্র । না । শ্ৰীশ। সূৰ্য্যমুখীর কোন সংবাদ পাইলে ? কোথায় তিনি ? নগেন্দ্র উদ্ধে অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া বলিলেন, “স্বর্গে!” শ্ৰীশচন্দ্র নীরব হইলেন। নগেন্দ্রও নীরব হইয়া মুখাবনত করিয়া রহিলেন। ক্ষণেক পরে মুখ তুলিয়া বলিলেন, “তুমি স্বৰ্গ মান না—আমি মানি।” শ্ৰীশচন্দ্র জানিতেন, পূৰ্ব্বে নগেন্দ্র স্বৰ্গ মানিতেন না ; বুঝিলেন যে, এখন মানেন। বুঝিলেন যে, এ স্বর্গ প্রেম ও বাসনার সৃষ্টি । “সূর্য্যমুখী কোথাও নাই” এ কথা সহ হয় না—“সূর্য্যমুখী স্বর্গে আছেন”—এ চিন্তায় অনেক সুখ । উভয়ে নীরব হইয়া বসিয়া রহিলেন । শ্রীশচন্দ্র জানিতেন যে, সাস্বনার কথার সময় এ নয়। তখন পরের কথা বিষবোধ হইবে। পরের সংসৰ্গও বিষ। এই বুঝিয়, ঐশচন্দ্র, নগেন্দ্রের শয্যাদি করাইবার উদ্যোগে উঠিলেন। আহারের কথা জিজ্ঞাসা করিতে সাহস হইল না ; মনে মনে করিলেন, সে ভার কমলকে দিবেন।