পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনচারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : সব ফুরাইল, যন্ত্রণ ফুরায় না $3: পাইবার ভরসায় কালি গিয়াছেন। কালি রাত্রে রাণীগঞ্জে তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবার সম্ভাবনা ছিল । V নগেন্দ্র। আমি কালি রাণীগঞ্জে ছিলাম না। সূৰ্য্যমুখীর কথা তিনি তোমাকে কিছু বলিয়াছিলেন ? শ্ৰীশ । সে সকল কালি বলিব । নগেন্দ্র। তুমি মনে করিতেছ, শুনিয়া আমার ক্লেশবৃদ্ধি হইবে। এ ক্লেশের আর বৃদ্ধি নাই। তুমি বল। তখন শ্ৰীশচন্দ্র ব্রহ্মচারীর নিকট শ্রুত তাহার সহিত সূৰ্য্যমুখীর সঙ্গে পথে সাক্ষাতের কথা, পীড়ার কথা এবং চিকিৎসা ও অপেক্ষাকৃত আরোগ্য লাভের কথা বলিলেন। অনেক বাদ দিয়া বলিলেন,—স্বৰ্য্যমুখী কত দুঃখ পাইয়াছিলেন, সে সকল বলিলেন না । শুনিয়া, নগেন্দ্র গৃহ হইতে নির্গত হইলেন । শ্ৰীশচন্দ্র সঙ্গে যাইতেছিলেন, কিন্তু নগেন্দ্র বিরক্ত হইয়া নিযেধ করিলেন। পথে পথে নগেন্দ্র রাত্রি দুই প্রহর পর্য্যস্ত পাগলের মত বেড়াইলেন । ইচ্ছা, জনস্রোতোমধ্যে আত্মবিস্মৃতি লাভ করেন । কিন্তু জনস্রোত তখন . মন্দীভূত হইয়াছিল—আর আত্মবিস্মৃতি কে লাভ করিতে পারে? তখন পুনৰ্ব্বার স্ত্রীশচন্দ্রের গৃহে ফিরিয়া আসিলেন । শ্ৰীশচন্দ্র আবার নিকটে বসিলেন। নগেন্দ্র বলিলেন, “আরও কথা আছে। তিনি কোথায় গিয়াছিলেন, কি করিয়াছিলেন, তাহ ব্ৰহ্মচারী অবশ্য র্তাহার নিকট শুনিয়া থাকিবেন । ব্রহ্মচারী তোমাকে বলিয়াছেন কি ?” শ্ৰীশ । আজি আর সে সকল কথায় কাজ কি ? আজ শ্রান্ত আছ, বিশ্রাম কর। নগেন্দ্র ভ্ৰকুটা করিয়া মহাপরুষ কণ্ঠে কহিলেন, “বল।” শ্ৰীশচন্দ্র নগেন্দ্রের মুখপ্রতি চাহিয়া দেখিলেন, নগেন্দ্র পাগলের মত হইয়াছেন ; বিছাদগর্ভ মেঘের মত র্তাহার মুখ কালিময় হইয়াছে। ভীত হইয়া শ্ৰীশচন্দ্র বলিলেন, “বলিতেছি।” নগেন্দ্রের মুখ প্রসন্ন হইল ; শ্ৰীশচন্দ্র সংক্ষেপে বলিলেন, “গোবিন্দপুর হইতে সূৰ্য্যমুখী স্থলপথে অল্প অল্প করিয়া প্রথমে পদব্রজে এই দিকে আসিয়াছিলেন।” নগেন্দ্র। প্রত্যহ কত পথ চলিতেন ? শ্ৰীশ । এক ক্রোশ দেড় ক্রোশ । 象 নগেন্দ্র। তিনি ত একটি পয়সাও লইয়া বাড়ী হইতে যান নাই-দিনপাত হইত কিসে ? শ্ৰীশ । কোন দিন উপবাস—কোন দিন ভিক্ষা–তুমি পাগল ॥