পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

»२० বিষবৃক্ষ এই বলিয়া শ্রীশচন্দ্র নগেন্দ্রকে তাড়না করিলেন। কেন না, নগেন্দ্র আপনার হস্তদ্বারা আপনার কণ্ঠরোধ করিতেছেন, দেখিতে পাইলেন। বলিলেন, “মরিলে কি সূৰ্য্যমুখীকে পাইবে ”ি এই বলিয়। নগেন্দ্রের হস্ত লইয়া আপনার হস্তমধ্যে রাখিলেন। নগেন্দ্র বলিলেন, “বল।” শ্ৰীশ । তুমি স্থির হইয়া না শুনিলে আমি আর বলিব না। কিন্তু শ্ৰীশচন্দ্রের কথা আর নগেন্দ্রের কর্ণে প্রবেশ করিল না। র্তাহার চেতনা বিলুপ্ত হইয়াছিল । নগেন্দ্র মুদ্রিতনয়নে স্বর্গারূঢ়। সূৰ্য্যমুখীর রূপ ধ্যান করিতেছিলেন । দেখিতেছিলেন তিনি রত্নসিংহাসনে রাজরাণী হইয়া বসিয়া আছেন ; চারিদিক্ হইতে শীতল সুগন্ধময় পবন তাহার অলকদাম ফুলাইতেছে ; চারি দিকে পুষ্পনিৰ্মিত বিহঙ্গগণ উড়িয়া বীণারবে গান করিতেছে। দেখিলেন, তাহার পদতলে শত শত কোকনদ ফুটিয়া রহিয়াছে ; তাহার সিংহাসন-চন্দ্রাতপে শতচন্দ্র জ্বলিতেছে, চারি পার্শ্বে শত শত নক্ষত্র জ্বলিতেছে। দেখিলেন, নগেন্দ্র স্বয়ং এক অন্ধকারপূর্ণ স্থানে পড়িয়া আছেন ; তাহার সর্বাঙ্গে বেদন ; অস্বরে তাহাকে বেত্ৰাঘাত করিতেছে ; সূৰ্য্যমুখী অঙ্গুলিসঙ্কেতে তাহাদিগকে নিষেধ করিতেছেন । 崇 অনেক যত্নে শ্রীশচন্দ্র নগেন্দ্রের চেতনাবিধান করিলেন । চেতনাপ্রাপ্ত হইয়। নগেন্দ্র উচ্চৈঃস্বরে ডাকিলেন, “সূর্য্যমুখি ! প্রাণাধিকে । কোথায় তুমি ?” চীৎকার শুনিয়া শ্ৰীশচন্দ্র স্তম্ভিত এবং ভীত হইয়া নীরবে বসিলেন। ক্রমে নগেন্দ্র স্বভাবে পুনঃস্থাপিত হইয়া বলিলেন, “বল ।” শ্ৰীশচন্দ্র ভীত হইয়া বলিলেন, “আর কি বলিব ?” নগেন্দ্র। বল, নহিলে আমি এখনই প্রাণত্যাগ করিব । ভীত শ্ৰীশচন্দ্র পুনৰ্ব্বার বলিতে লাগিলেন, “স্বৰ্য্যমুখী অধিক দিন এরূপ কষ্ট পান নাই। একজন ধনাঢ্য ব্রাহ্মণ সপরিবারে কাশী যাইতেছিলেন । তিনি কলিকাতা পৰ্য্যন্ত নৌকাপথে আসিতেছিলেন, একদিন নদীকূলে সূৰ্য্যমুখী বৃক্ষমূলে শয়ন করিয়াছিলেন, ব্রাহ্মণের সেইখানে পাক করিতে উঠিয়াছিলেন । গৃহিণীর সহিত সূৰ্য্যমুখীর আলাপ হয়। সূৰ্য্যমুখীর অবস্থা দেখিয়া এবং চরিত্রে প্রতী হইয়া ব্রাহ্মণগৃহিণী তাহাকে নৌকায় তুলিয়া লইলেন। সূৰ্য্যমুখী তাহার সাক্ষাতে বলিয়াছিলেন যে, তিনিও কাশী যাইবেন।” নগেন্দ্র। সে ব্রাহ্মণের নাম কি ? বাট কোথায় ? নগেন্দ্র মনে মনে কি প্রতিজ্ঞ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাহার পর ?”