পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরার বিষবৃক্ষের ফল হীরা মহারস্তু কপর্দকের বিনিময়ে বিক্রয় করিল। ধৰ্ম্ম চিরকষ্টে রক্ষিত হয়, কিন্তু এক দিনের অসাবধানতায় বিনষ্ট হয়। হীরার তাহাই হইল। যে ধনের লোভে হীরা এই মহারস্তু বিক্রয় করিল, সে এক কড়া কাণা কড়ি। কেন না, দেবেন্দ্রের প্রেম বন্যার জলের মত ; যেমন পঙ্কিল, তেমনি ক্ষণিক । তিন দিনে বন্যার জল সরিয়া গেল, হীরাকে কাদায় বসাইয়। রাখিয়া গেল। যেমন কোন কোন কৃপণ অথচ যশোলিঙ্গ ব্যক্তি বহুকালাবধি প্রাণপণে সঞ্চিতাৰ্থ রক্ষা করিয়া, পুত্ৰোদ্ধাহ বা অন্ত উৎসব উপলক্ষে এক দিনের মুখের জন্য ব্যয় করিয়া ফেলে, হীরা তেমনি এত দিন যত্নে ধৰ্ম্মরক্ষা করিয়া, এক দিনের মুখের জন্য তাহা নষ্ট করিয়া উৎসৃষ্টার্থ কৃপণের ন্যায় চিরানুশোচনার পথে দণ্ডায়মান হইল । ক্রীড়াশীল বালক কর্তৃক অল্পোপভুক্ত অপক চুতফলের হ্যায়, হীরা দেবেন্দ্রকর্তৃক পরিত্যক্ত হইলে, প্রথমে হৃদয়ে দারুণ ব্যথা পাইল। কিন্তু কেবল পরিত্যক্ত নহে—সে দেবেন্দ্রের দ্বারা যেরূপ অপমানিত ও মৰ্ম্মপীড়িত হইয়াছিল, তাহান্ত্রীলোকমধ্যে অতি অধমারও অসহ । যখন দেখা সাক্ষাতের শেষ দিনে হীর দেবেন্দ্রের চরণাবলুষ্ঠিত হইয়া বলিয়াছিল যে, “দাসীরে পরিত্যাগ করিও না, তখন দেবেন্দ্র তাহাকে বলিয়াছিলেন যে, “আমি কেবল কুন্দনন্দিনীর লোভে তোমাকে এত দূর সম্মানিত করিয়াছিলাম—যদি কুন্দের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করাইতে পার, তবেই তোমার সঙ্গে আমার আলাপ থাকিবে-নচেৎ এই পৰ্য্যস্ত। তুমি যেমন গৰ্বিবত, তেমনি আমি তোমাকে প্রতিফল দিলাম ; এখন তুমি এই কলঙ্কের ডালি মাথায় লইয়া গৃহে যাও।” : o হীরা ক্রোধে অন্ধকার দেখিতে লাগিল। যখন তাহার মস্তক স্থির হইল, তখন সে দেবেন্দ্রের সম্মুখে দাড়াইয়া, ক্রকুট কুটিল করিয়া, চক্ষু আরক্ত করিয়া, যেন শতমুখে দেবেন্দ্রকে তিরস্কার করিল। মুখর, পাপিষ্ঠ। স্ত্রীলোকেই যেরূপ তিরস্কার করিতে জানে, সেইরূপ তিরস্কার করিল। তাহাতে দেবেন্দ্রের ধৈর্য্যচ্যুতি হইল। তিনি হীরাকে পদাঘাত করিয়া প্রমোদোদ্যান হইতে বিদায় করিলেন। হীরা পাপিষ্ঠা—দেবেন্দ্র পাপিষ্ঠ এবং পশু । এইরূপ উভয়ের চিরপ্রেমের প্রতিশ্রুতি সফল হইয়া পরিণত হইল। - হীরা পদাহত হইয়া গৃহে গেল না । গোবিন্দপুরে এক জন চাণ্ডাল চিকিৎসা ব্যবসার করিত। সে কেবল চাণ্ডালাদি ইতরঞ্জাতির চিকিৎসা করিত। চিকিৎসা বা ঔষধ