পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বিষবৃক্ষ আছড়াইতেছেন । কোন কোন ভদ্রগ্রামের ঘাটে কুলকামিনীরা ঘাট আলো করিতেছেন। প্রাচীনারা বক্তৃতা করিতেছেন—মধ্যবয়স্কার শিবপূজা করিতেছেন—যুবতীর ঘোমটা দিয়া ডুব দিতেছেন—আর বালক বালিকার চেচাইতেছে, কাদা মাখিতেছে, পূজার ফুল কুড়াইতেছে, সাতার দিতেছে, সকলের গায়ে জল দিতেছে, কখন কখন ধ্যানে মগ্ন৷ মুদ্রিতনয়ন কোন গৃহিণীর সম্মুখস্থ কাদার শিব লইয়া পলাইতেছে। ব্রাহ্মণ ঠাকুরের নিরীহ ভালমামুষের মত আপন মনে গঙ্গাস্তব পড়িতেছেন, পূজা করিতেছেন, এক একবার আকণ্ঠনিমজ্জিত কোন যুবতীর প্রতি অলক্ষ্যে চাহিয়া লইতেছেন। আকাশে শাদী মেঘ রৌদ্রতপ্ত হইয়া ছুটিতেছে, তাহার নীচে কৃষ্ণবিন্দুবৎ পাখী উড়িতেছে, নারিকেল গাছে চিল বসিয়া, রাজমন্ত্রীর মত চারিদিক দেখিতেছে, কাহার কিসে ছে৷ মারিবে । বক ছোট লোক, কাদী ঘাটিয়া বেড়াইতেছে। ডাহুক রসিক লোক, ডুব মারিতেছে। আর আর পার্থী হাল্কা লোক, কেবল উড়িয়া বেড়াইতেছে । হাটুরিয়া নৌকা হটর হটর করিয়া যাইতেছে— আপনার প্রয়োজনে। খেয়া নৌকা গজেন্দ্রগমনে যাইতেছে,—পরের প্রয়োজনে। বোঝাই নৌকা যাইতেছে না,—তাহাদের প্রভুর প্রয়োজন মাত্র । নগেন্দ্র প্রথম দুই এক দিন দেখিতে দেখিতে গেলেন। পরে এক দিন আকাশে মেঘ উঠিল, মেঘ আকাশ ঢাকিল, নদীর জল কালো হইল, গাছের মাথা কট হইল, মেঘের কোলে বক উড়িল, নদী নিম্পদ হইল। নগেন্দ্র নাবিকদিগকে আজ্ঞা করিলেন, “নৌকাটা কিনারায় বাধিও।” রহমত মোল্লা মাঝি তখন নেমাজ করিতেছিল, কথার উত্তর দিল না। রহমত আর কখন মাঝিগিরি করে নাই—তাহার নানার খালা মাঝির মেয়ে ছিল, তিনি সেই গৰ্ব্বে মাঝিগিরির উমেদার হইয়াছিলেন, কপালক্রমে সিদ্ধকাম হইয়াছিলেন। রঙ্গমুক্ত হাকে ডাকে খাটাে নন, নেমাজ সমাপ্ত হইলে বাবুর দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “ভয় কি, হজুর । আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।” রহমত মোল্লার এত সাহসের কারণ এই যে, কিনারা অতি নিকট, অবিলম্বেই কিনারায় নৌকা লাগিল। তখন নাবিকেরা নামিয়া নৌকা কাছি করিল। বোধ হয়, রহমত মোল্লার সঙ্গে দেবতার কিছু বিবাদ ছিল, ঝড় কিছু গুরুতর বেগে আসিল । ঝড় আগে আসিল । ঝড় ক্ষণেক কাল গাছপালার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করিয়া সহোদর বৃষ্টিকে ডাকিয়া আনিল। তখন দুই डाई বড় মাতামাতি আরম্ভ করিল। ভাই বৃষ্টি, ভাই ঝড়ের কাধে চড়িয়া উড়িতে লাগিল। দুই ভাই গাছের মাথা ধরিয়া নোয়ায়, ডাল ভাঙ্গে, লতা ছেড়ে, ফুল লোপে, নদীর জল উড়ায়, নানা উৎপাত করে। এক ভাই