পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুশ্চত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : স্তিমিত প্রদীপে SOH শুভ্রকাস্তি দেবর্ষি নারদ ; তিনি বড় আনন্দিতের ন্যায় সকল দেখিতেছেন, বাতাসে র্তাহার উত্তরীয় এবং শ্মশ্র উড়িতেছে। চারিদিকে বহুসংখ্যক পৌরবর্গ নানাপ্রকার ধেশভূষা ধারণ করিয়া আলো করিয়া রহিয়াছে । বহুসংখ্যক ভিক্ষুক ব্রাহ্মণ আসিয়াছে। কত কত পুররক্ষিগণ গোল থামাইতেছে। এই চিত্রের নীচে সূৰ্য্যমুখী স্বহস্তে লিখিয়া রাখিয়াছেন, “যেমন কৰ্ম্ম তেমনি ফল । স্বামীর সঙ্গে, সোণা রূপার তুলা ?” নগেন্দ্র যখন কক্ষমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন, তখন রাত্রি দ্বিপ্রহর অতীত হইয়াছিল । রাত্রি অতি ভয়ানক । সন্ধ্যার পর হইতে অল্প অল্প বৃষ্টি হইয়াছিল এবং বাতাস উঠিয়াছিল। এক্ষণে ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি হইতেছিল, বায়ু প্রচণ্ডবেগ ধারণ করিয়াছিল । গৃহের কবাট যেখানে যেখানে মুক্ত ছিল, সেইখানে সেইখানে বজ্ৰতুল্যশব্দে তাহার প্রতিঘাত হইতেছিল। সাসী সকল ঝনঝন শব্দে শদিত হইতেছিল। নগেন্দ্ৰ শয্যাগৃহে প্রবেশ করিয়া দ্বার রুদ্ধ করিলেন। তখন বাত্যানিনাদ মন্দীভূত হইল। খাটের পার্থে আর একটি দ্বার খোলা ছিল—সে দ্বার দিয়া বাতাস আসিতেছিল না, সে দ্বার মুক্ত রহিল। নগেন্দ্র শয্যাগৃহে প্রবেশ করিয়া, দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া একখানি সোফার উপর উপবেশন করিলেন । নগেন্দ্র তাহাতে বসিয়া কত যে কাদিলেন, তাহ কেহ জানিল না । কতবার সূৰ্য্যমুখীর সঙ্গে মুখামুখি করিয়া সেই সোফার উপর বসিয়া কত মুখের কথা বলিয়াছিলেন । নগেন্দ্র ভূয়োভূয়: সেই অচেতন আসনকে চুম্বনালিঙ্গন করিলেন। আবার মুখ তুলিয়। সূৰ্য্যমুখীর প্রিয় চিত্রগুলির প্রতি চাহিয়া দেখিলেন। গৃহে উজ্জল দীপ জ্বলিতেছিল —তাহার চঞ্চল রশ্মিতে সেই সকল চিত্ৰপুত্তলি সজীব দেখাইতেছিল। প্রতিচিত্রে নগেন্দ্র সূৰ্য্যমুখীকে দেখিতে লাগিলেন। তাহার মনে পড়িল যে, উমার কুসুমসজ্জা দেখিয়া স্বৰ্য্যমুখী এক দিন আপনি ফুল পরিতে সাধ করিয়াছিলেন। তাহাতে নগেন্দ্র আপনি উদ্যান হইতে পুষ্পচয়ন করিয়া আনিয়া স্বহস্তে সূৰ্য্যমুখীকে কুসুমময়ী সাজাইয়াছিলেন। তাহাতে সূৰ্য্যমুখী যে কত সুখী হইয়াছিলেন—কোন রমণী রত্নময়ী সাজিয়া তত সুখী হয় ? আর এক দিন সুভদ্রার সারথ্য দেখিয়া সূৰ্য্যমুখী নগেন্দ্রের গাড়ি হাকাইবার সাধ করিয়াছিলেন । পত্নীবৎসল নগেন্দ্র তখনই একখানি ক্ষুদ্র যানে দুইটি ছোট ছোট বৰ্ম্ম জুড়িয়া অন্তঃপুরের উদ্যানমধ্যে সূৰ্য্যমুখীর সারথীজন্য আনিলেন। উভয়ে তাহাতে আরোহণ করিলেন। সূৰ্য্যমুখী বলগা ধরিলেন। অশ্বের আপনি চলিল। দেখিয়া, স্বৰ্য্যমুখী মুভদ্রার মত নগেন্দ্রের দিকে মুখ ফিরাইয়া দংশিতধরে টিপি টিপি হাসিতে লাগিলেন। এই অবকাশে