পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

y প্রথম পরিচ্ছেদ : নগেন্দ্রের নৌকাযাত্রা & রহমত মোল্লার টুপি উড়াইয়া লইয়া গেল, আর এক ভাই তাহার দাড়িতে প্রস্রবণের স্বজন করিল। দাড়ীরা পাল মুড়ি দিয়া বসিল । বাবু সব সাস ফেলিয়া দিলেন। ভূত্যের নৌকাসজ্জা সকল রক্ষা করিতে লাগিল । নগেন্দ্র বিষম সঙ্কটে পড়িলেন। নৌকা হইতে ঝড়ের ভয়ে নামিলে নাবিকেরা কাপুরুষ মনে করিবে—ন নামিলে সূৰ্য্যমুখীর কাছে মিথ্যাবাদী হইতে হয়। কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করিবেন, “তাহাতেই বা ক্ষতি কি ?’ আমরা জানি না, কিন্তু নগেন্দ্র ক্ষতি বিবেচনা করিতেছিলেন। এমত সময়ে রহমত মোল্লা স্বয়ং বলিল যে, “হজুর, পুরাতন কাছি, কি জানি কি হয়, ঝড় বড় বাড়িল, নৌকা হইতে নামিলে ভাল হইত।” সুতরাং নগেন্দ্র নামিলেন । নিরাশ্রয়ে, নদীতীরে ঝড় বৃষ্টিতে দাড়ান কাহারও স্বসাধা নহে। বিশেষ সন্ধ্যা হইল, ঝড় থামিল না, সুতরাং আশ্রয়ানুসন্ধানে যাওয়া কৰ্ত্তব্য বিবেচনা করিয়া নগেন্দ্র গ্রামাভিমুখে চলিলেন। নদীতীর হইতে গ্রাম কিছু দূরবর্তী ; নগেন্দ্র পদব্রজে কর্দমময় পথে চলিলেন। বৃষ্টি থামিল, ঝড়ও অল্পমাত্র রহিল, কিন্তু আকাশ মেঘপরিপূর্ণ ; সুতরাং রাত্রে আবার ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা । নগেন্দ্র চলিলেন, ফিরিলেন না। আকাশে মেঘাড়ম্বরকারণ রাত্রি প্রদোষকালেই ঘনান্ধতমোময়ী হইল । গ্রাম, গুহ, প্রাস্তর, পথ, নদী, কিছুই লক্ষ্য হয় না। কেবল বনবিটপী সকল, সহস্ৰ সহস্র খদ্যোতমাল৷ পরিমণ্ডিত হইয়া হীরকখচিত কৃত্রিম বৃক্ষের হ্যায় শোভা পাইতেছিল । কেবলমাত্র গর্জনবিরত শ্বেতকৃষ্ণাভ মেঘমালার মধ্যে হ্রস্বদীপ্তি সৌদামিনী মধ্যে মধ্যে চমকিতেছিল— স্ত্রীলোকের ক্রোধ একেবারে হ্রাস প্রাপ্ত হয় না । কেবলমাত্র নববারি সমাগমপ্রফুল্ল ভেকেরা উৎসব করিতেছিল। ঝিল্লীরব মনোযোগপূর্বক লক্ষ্য করিলে শুনা যায়, রাবণের চিতার ন্যায় অশ্রাস্ত রব করিতেছে, কিন্তু বিশেষ মনোযোগ না করিলে লক্ষ্য হয় না। শব্দের মধ্যে বৃক্ষাগ্র হইতে বৃক্ষপত্রের উপর বর্ষবিশিষ্ট বারিবিন্দুর পতনশব্দ, বৃক্ষতলস্থ বর্ষাজলে পত্রচু্যত জলবিন্দুপতনশব্দ, পথিস্থ অনিঃস্থত জলে শৃগালের পদসঞ্চারণশব্দ, কদাচিৎ বৃক্ষারূঢ় পক্ষীর আর্দ্র পক্ষের জলমোচনার্থ পক্ষবিধূননশব্দ। মধ্যে মধ্যে শমিতপ্রায় বায়ুর ক্ষণিক গর্জন, তৎসঙ্গে বৃক্ষপত্রচু্যত বারিবিন্দু সকলের এককালীন পতনশব্দ । ক্রমে নগেন্দ্র দূরে একটা আলো দেখিতে পাইলেন। জলপ্লাবিত ভূমি অতিক্রম করিয়া, বৃক্ষচু্যত বারি কর্তৃক সিক্ত হইয়া, বৃক্ষতলস্থ শৃগালের ভীতি বিধান করিয়া, নগেন্দ্র সেই আলোকাভিমুখে চলিলেন । বহু কষ্টে আলোকসন্নিধি উপস্থিত হইলেন । দেখিলেন, এক ইষ্টকনিৰ্ম্মিত