পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీశ్రీ বিষবৃক্ষ কুৰ্ম্মানী নহে । তখন এমন আলো নাই যে, মানুষ চিনিতে পারা যায়। কিন্তু وی ۲ گی আকার ও ভঙ্গী কতক কতক উপলব্ধ হইল। আকার ও ভঙ্গী নগেন্দ্র মুহূৰ্ত্তকাল বিলক্ষণ করিয়া দেখিলেন। দেখিয়া, সেই দণ্ডায়মান স্ত্রীমূৰ্ত্তির পদতলে পতিত হইলেন। কাতরস্বরে অশ্রুপরিপূর্ণ লোচনে বলিলেন, “দেবীই হও, আর মানুষই হও, তোমার পায়ে পড়িতেছি, আমার সঙ্গে একবার কথা কও । নচেৎ আমি মরিব।” রমণী কি বলিল, কপালদোষে নগেন্দ্র তাহা বুঝিতে পারিলেন না। কিন্তু কথার শব্দ যেমন নগেন্দ্রের কর্ণে প্রবেশ করিল, অমনি তিনি তীরবৎ দাড়াইয়া উঠিলেন। এবং দণ্ডায়মান স্ত্রীলোককে বক্ষে ধারণ করিতে গেলেন। কিন্তু তখন মন, শরীর দুই মোহে আচ্ছন্ন হইয়াছে—পুনৰ্ব্বার বৃক্ষচু্যত বল্লীবৎ সেই মোহিনীর পদপ্রান্তে পড়িয়া গেলেন। আর কথা কহিলেন না। রমণী আবার উরুদেশে মস্তক তুলিয়া লইয়া বসিয়া রহিলেন । যখন নগেন্দ্র মোহ বা নিদ্রা হইতে উত্থিত হইলেন, তখন দিনোদয় হইয়াছে। গৃহমধ্যে আলো। গৃহপাশ্বে উদ্যানমধ্যে বৃক্ষে বৃক্ষে পক্ষিগণ কলরব করিতেছে। শিরঃস্থ আলোকপন্থা হইতে বালসূর্য্যের কিরণ গৃহমধ্যে পতিত হইতেছে। তখনও নগেন্দ্র দেখিলেন, কাহার উরুদেশে তাহার মস্তক রহিয়াছে। চক্ষু ন চাহিয়৷ বলিলেন, “কুন্দ, তুমি কখন আসিলে ? আমি আজি সমস্ত রাত্রি সূৰ্য্যমুখীকে স্বপ্ন দেখিয়াছি। -স্বপ্নে দেখিতেছিলাম, সূৰ্য্যমুখীর কোলে মাথা দিয়া আছি। তুমি যদি সূৰ্য্যমুখী হইতে পারিতে তবে কি মুখ হইত ” রমণী বলিল,“সেই পোড়ারমুখীকে দেখিলে যদি তুমি অত সুখী হও, তবে আমি সেই পোড়ারমুখীই হইলাম।” নগেন্দ্র চাহিয়া দেখিলেন। চমকিয়া উঠিয়া বসিলেন । চক্ষু মুছিলেন । আবার চাহিলেন। মাথা ধরিয়া বসিয়া রহিলেন। আবার চক্ষু মুছিয়া চাহিয়া দেখিলেন। তখন পুনশ্চ মুখাবনত করিয়া, মৃদু মৃছ আপন আপনি বলিতে লাগিলেন, “আমি কি পাগল হইলাম-না, সূৰ্য্যমুখী বাচিয়া আছেন ? শেষে এই কি কপালে ছিল ? আমি পাগল হইলাম ” এই বলিয়। নগেন্দ্র ধরাশায়ী হইয়া বাহুমধ্যে চক্ষু লুকাইয়া আবার কাদিতে লাগিলেন । 驗 - এবার রমণী তাহার পদযুগল ধরিলেন। র্তাহার পদযুগলে মুখাবৃত করিয়া, তাহ। অশ্রুজলে অভিষিক্ত করিলেন। বলিলেন, “উঠ, উঠ ! আমার জীবনসৰ্ব্বস্ব। মাটি ছাড়িয়া উঠিয়া বসে। আমি যে এত দুঃখ সহিয়াছি, আজ আমার সকল ছুঃখের শেষ হইল। উঠ উঠ ! আমি মরি নাই। আবার তোমার পদসেবা করিতে আসিয়াছি।”