পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ 8 ο বিষবৃক্ষ পূৰ্ব্বাপেক্ষাও কুলের প্রিযুবাদিনী ও আজাকারী হইয়াছিল। অন্য কেহ এই কাপট্য সহজেই বুঝিতে পারিত—কিন্তু কুন্দ অসামান্ত সরলা এবং আশুসস্তুষ্টা—সুতরাং হীরার এই নূতন প্রিয়কারিতায় প্রতা ব্যতীত সন্দেহবিশিষ্ট হয় নাই। অতএব, এখন কুন্দ হীরাকে পূৰ্ব্বমত বিশ্বাসভাগিনী বিবেচনা করিত। কোন কালেই রুক্ষভাষিণী ভিন্ন অবিশ্বাসভাগিনী মনে করে নাই। হীরা জিজ্ঞাসা করিল, “ম ঠাকুরাণি, কঁাদিতেছ কেন ?” কুন্দ কথা কহিল না। হীরার মুখপ্রতি চাহিয়া দেখিল। হীরা দেখিল, কুন্দের চক্ষু ফুলিয়াছে, বালিশ ভিজিয়াছে। হীরা কহিল, “এ কি ? সমস্ত রাত্রিই কেঁদেছ না কি ? কেন, বাবু কিছু বলেছেন ?” কুন্দ বলিল, “কিছু না।” এই বলিয়া আবার সংবৰ্দ্ধিতবেগে রোদন করিতে লাগিল। হীরা দেখিল, কোন বিশেষ ব্যাপার ঘটিয়াছে। কুন্দের ক্লেশ দেখিয়া আনন্দে তাহার হৃদয় ভাসিয়া গেল। মুখ স্নান করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বাবু বাড়ী আসিয়া তোমার সঙ্গে কি কথাবাৰ্ত্ত কহিলেন ? আমরা দাসী, আমাদের কাছে তা বলিতে হয়।” . কুন্দ কহিল, “কোন কথাবার্তা বলেন নাই।" হীরা বিস্মিত হইয়া কহিল, “সে কি, মা ! এত দিনের পর দেখা হলো ! কোন কথাই বলিলেন না ?” কুন্দ কহিল, “আমার সঙ্গে দেখা হয় নাই।” এই কথা বলিতে কুন্দের রোদন অসংবরণীয় হইল । হীরা মনে মনে বড় প্রীত হইল। হাসিয়া বলিল, “ছি মা, এতে কি কাদতে হয় ? কত লোকের কত বড় বড় দুঃখ মাথার উপর দিয়া গেল—আর তুমি একটু দেখা করার বিলম্বজন্য র্কাদিতেছ?” “বড় বড় দুঃখ” আবার কি প্রকার, কুন্দ তাহা কিছুই বুঝিতে পারিল না। হীরা তখন বলিতে লাগিল, “আমার মত যদি তোমাকে সহিতে হইত—তবে এত দিনে তুমি আত্মহত্যা করিতে।” “আত্মহত্য,” এই মহা অমঙ্গলজনক শব্দ কুন্দনন্দিনীর কানে দারুণ বাজিল। সে শিহরিয়া উঠিয়া বসিল । রাত্রিকালে অনেকবার সে আত্মহত্যার কথা ভাবিয়াছিল। হীরার মুখে সেই কথা শুনিয়া নরাস্কিতের ন্যায় বোধ হইল।