পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

حس۹ বিষবৃক্ষ وينا প্রাচীন বাসগৃহ হইতে আলো নির্গত হইতেছে। গৃহের দ্বার মুক্ত। নগেন্দ্র ভূত্যকে বাহিরে রাখিয়া গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, গৃহের অবস্থা ভয়ানক। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ দীপনির্বাণ গৃহটি নিতান্ত সামান্ত নহে। কিন্তু এখন তাহাতে সম্পদলক্ষণ কিছুই নাই। প্রকোষ্ঠ সকল ভগ্ন, মলিন, মনুষ্য-সমাগম-চিহ্ন-বিরহিত। কেবলমাত্র পেচক, মূষিক ও নানাবিধ কীটপতঙ্গাদি-সমাকীর্ণ। একটিমাত্র কক্ষে আলো জ্বলিতেছিল। সেই কক্ষমধ্যে নগেন্দ্র প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, কক্ষমধ্যে মনুষ্য-জীবনোপযোগী তুই একটা সামগ্ৰী আছে মাত্র, কিন্তু সে সকল সামগ্ৰী দারিদ্র্যব্যঞ্জক। দুই একটা হাড়ি—একটা ভাঙ্গ উনান —তিন চারিখান তৈজস—ইহাই গৃহালঙ্কার । দেওয়ালে কালি, কোণে ঝুল ; চারিদিকে আরস্থল, মাকড়সা, টিকটিকি, ইন্দুর বেড়াইতেছে। এক ছিন্ন শয্যায় এক জন প্রাচীন শয়ন করিয়া আছেন। দেখিয়া বোধ হয় তাহার অস্তিমকাল উপস্থিত । চক্ষু মান, নিশ্বাস প্রখর, ওষ্ঠ কম্পিত । শয্যাপার্শ্বে গুহচু্যত ইষ্টকখণ্ডের উপর একটি মৃন্ময় প্রদীপ, তাহাতে তৈলাভাব ; শয্যোপরিস্থ জীবন-প্রদীপেও তাঁহাই। আর শয্যাপার্শেও আর এক প্রদীপ ছিল,—এক অনিন্দিতগৌরকাস্তি স্নিগ্ধজ্যোতিৰ্ম্ময়রূপিণী বালিকা । তৈলহীন প্রদীপের জ্যোতিঃ অপ্রখর বলিয়াই হউক, অথবা গৃহবাসী জুই জন জীও ভাবী বিরহের চিন্তায় প্রগাঢ়তর বিমনা থাকার কারণেই হউক, নগেন্দ্রের প্রবেশকালে কেহই তাহাকে দেখিল না। তখন নগেন্দ্র দ্বারদেশে দাড়াইয়া সেই প্রাচীনের মুখনিৰ্গত চরমকালিক দুঃখের কথা সকল শুনিতে লাগিলেন । এই দুই জন, প্রাচীন এবং বালিকা, এই বহুলোকপূর্ণ লোকালয়ে নিঃসহায় । এক দিন ইহাদিগের সম্পদ ছিল, লোক জন, দাস দাসী, সহায় সৌষ্ঠব সব ছিল। কিন্তু চঞ্চলা কমলার কৃপার সঙ্গে সঙ্গে একে একে সকলই গিয়াছিল । সদ্যঃসমাগত দারিদ্র্যের পীড়নে পুত্রকন্যার মুখমণ্ডল, হিমনিষিক্ত পদ্মবৎ দিন দিন মান দেখিয়া, অগ্ৰেই গৃহিণী নদী-সৈকতশয্যায় শয়ন করিলেন। আর সকল তারাগুলিও সেই চাদের সঙ্গে সঙ্গে নিবিল। এক বংশধর পুত্র, মাতার চক্ষের মণি, পিতার বাৰ্দ্ধক্যের ভরসা, সেও পিতৃসমক্ষে চিতারোহণ করিল। কেহ রহিল না, কেবল প্রাচীন