পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনপঞ্চাশত্তম পরিচ্ছেন্ন ; এত দিনে মুখ ফুটিল Sß& তোমাকে রাখিয়া আমি মরিব—আর তাহার মুখের পথে কাটা হইয়া থাকিৰ না। আমি মরিব বলিয়াই স্থির করিয়াছিলাম—তবে তোমাকে দেখিলে আমার মরিক্তে ইচ্ছ করে না।” - নগেন্দ্র কোন উত্তর করিতে পারিলেন না। আজি তিনি বালিকা অবাকৃপটু কুন্দনন্দিনীর নিকট নিরুত্তর হইলেন । কুন্দ ক্ষণকাল নীরব হইয়া রহিল। তাহার কথা কহিবার শক্তি অপনীত হইতেছিল। মৃত্যু তাহাকে অধিকৃত করিতেছিল। নগেন্দ্র তখন, সেই মৃত্যুচ্ছায়ান্ধকারমান মুখমণ্ডলের স্নেহপ্রফুল্লতা দেখিতেছিলেন। তাহার সেই আধিক্লিষ্ট মুখে মন্দবিছান্নিন্দিত যে হাসি তখন দেখিয়াছিলেন, নগেন্দ্রের প্রাচীন বয়স পর্য্যন্ত তাহা হৃদয়ে অঙ্কিত ছিল । কুন্দ আবার কিছুকাল বিশ্রামলাভ করিয়া, অপরিতৃপ্তের ন্যায় পুনরপি ক্লিষ্টনিশ্বাসসহকারে কহিতে লাগিল, “আমার কথা কহিবার তৃষ্ণ নিবারণ হইল না—আমি তোমাকে দেবতা বলিয়া জানিতাম—সাহস করিয়া কখনও মুখ ফুটিয়া কথা কহি নাই। আমার সাধ. মিটিল না—আমার শরীর অবসন্ন হইয়া আসিতেছে—আমার মুখ শুকাইতেছে—জিব টানিতেছে—আমার আর বিলম্ব নাই।” এই বলিয়া কুন্দ, পৰ্য্যস্কাবলম্বন ত্যাগ করিয়া, ভূমে শয়ন করিয়া, নগেন্দ্রের অঙ্গে মাথা রাখিল এবং নয়ন মুদ্রিত করিয়া নীরব হইল। ডাক্তার আসিল । দেখিয়া শুনিয়া ঔষধ দিল না—আর ভরসা নাই দেখিয়া মানমুখে প্রত্যাবর্তন করিল। পরে সময় আসন্ন বুঝিয়া, কুন্দ স্বৰ্য্যমুখী ও কমলমণিকে দেখিতে চাহিল। র্তাহার। উভয়ে আসিলে, কুন্দ তাহদের পদধূলি গ্রহণ করিল। তাহারা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিলেন । তখন কুন্দনন্দিনী স্বামীর পদযুগলমধ্যে মুখ লুকাইল। তাহাকে নীরব দেখিয়া দুই জনে আবার উচ্চৈঃস্বরে কাদিয়া উঠিলেন। কিন্তু কুন্দ আর কথা কহিল না। ক্রমে ক্রমে চৈতন্যভ্রষ্ট হইয়া স্বামীর চরণমধ্যে মুখ রাখিয়া, নবীন যৌবনে কুন্দনন্দিনী প্রাণত্যাগ করিল। অপরিস্ফুট কুন্দকুসুম শুকাইল । প্রথম রোদন সংবরণ করিয়া সূৰ্য্যমুখী মৃত সপত্নী প্রতি চাহিয়া বলিলেন, “ভাগ্যবতি । তোমার মত প্রসন্ন অদৃষ্ট আমার হউক। আমি যেন এইরূপে স্বামীর চরণে মাথা রাখিয়া প্রাণত্যাগ করি।”