পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : ছায়৷ পূৰ্ব্বগামিনী ጳ الس۔ আর এই লোকমনোমোহিনী বালিকা, সেই বিজনবনবেষ্টিত ভগ্নগৃহে বাস করিতে লাগিল। পরস্পরে পরস্পরের একমাত্র উপায়। কুন্দনন্দিনী বিবাহের বয়স অতিক্রম করিয়াছিল, কিন্তু কুন্দ পিতার অন্ধের যষ্টি, এই সংসার-বন্ধনের এখন একমাত্র গ্রন্থি ; বৃদ্ধ প্ৰাণ ধরিয়া তাহাকে পরহস্তে সমর্পণ করিতে পারিলেন না। “আর কিছুদিন যাক,—কুন্দকে বিলাইয়৷ দিয়া কোথায় থাকিব ? কি লইয়া থাকিব ?” বিবাহের কথা মনে হইলে, বৃদ্ধ এইরূপ ভাবিতেন । এ কথা তাহার মনে হইত না যে, যে দিন তাহার ডাক পড়িবে, সে দিন কুন্দকে কোথায় রাখিয়া যাইবেন। আজি অকস্মাৎ যমদূত আসিয়া শয্যাপার্শ্বে দাড়াইল । তিনি ত চলিলেন। কুন্দনন্দিনী কালি কোথায় দাড়াইবে ? এই গভীর অনিবাৰ্য্য যন্ত্রণ মুমুধুর প্রতি নিশ্বাসে ব্যক্ত হইতেছিল। অবিরল মুদ্রিতোমুখনেত্রে বারিধারা পড়িতেছিল। আর শিরোদেশে প্রস্তরময়ী মূৰ্ত্তির স্বায় সেই ত্রয়োদশবর্ষীয় বালিকা স্থিরদৃষ্টে মৃত্যুমেঘাচ্ছন্ন পিতৃমুখপ্রতি চাহিয়াছিল। আপনা ভুলিয়, কালি কোথা যাইবে তাহা ভুলিয়া, কেবল গমনোন্মুখের মুখপ্রতি চাহিয়াছিল। ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধের বাক্যফুৰ্ত্তি অস্পষ্টতর হইতে লাগিল। নিশ্বাস কণ্ঠাগত হইল, চক্ষু নিস্তেজ হইল ; ব্যথিতপ্রাণ ব্যথা হইতে নিস্কৃতি পাইল। সেই নিভৃত কক্ষে, স্তিমিত প্রদীপে, কুন্দনন্দিনী একাকিনী পিতার মৃতদেহ ক্রোড়ে লইয়া বসিয়া রহিলেন । নিশা ঘনান্ধকারাবৃতা ; বাহিরে এখনও বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি পড়িতেছিল, বৃক্ষপত্রে তাহার শব্দ হইতেছিল, বায়ু রহিয়া রহিয়৷ গর্জন করিতেছিল, ভগ্ন গৃহের কবাট সকল শদিত হইতেছিল। গৃহমধ্যে নিৰ্ব্বাণোন্মুখ চঞ্চল ক্ষীণ প্রদীপালোক, ক্ষণে ক্ষণে শবমুখে পড়িয়া আবার ক্ষণে ক্ষণে অন্ধকারবৎ হইতেছিল। সে প্রদীপে অনেকক্ষণ তৈলকে হয় নাই। এই সময়ে ফুই চারি বার উজ্জলতর হইয়া প্রদীপ নিবিয়া গেল । তখন নগেন্দ্র নিঃশবাপদসঞ্চারে গৃহদ্বার হইতে অপস্থত হইলেন । ছায়া পূৰ্ব্বগামিনী z. নিশীথ সময় । ভগ্ন গৃহমধ্যে কুন্দনন্দিনী ও তাহার পিতার শব। কুন্দ ডাকিল, “বাবা।” কেহ উত্তর দিল না। কুন্দ একবার মনে করিল, পিতা ঘুমাইলেন, আবার মনে করিল, বুঝি মৃত্যু-কুল সে কথা স্পষ্ট মুখে আনিতে পারিল না। শেষে, কুন্দ আর