পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$ তৃতীয় পরিচ্ছেদ : ছায়া পূৰ্ব্বগামিনী ه. ভ্রুকুটি বিকাশ হইল, এবং তিনি মৃদ্ধগম্ভীর স্বরে কহিলেন, “বাছ, যাহা তোমাদ খছি তাহা কর। কিন্তু আমার সঙ্গে আসিলে ভাল করিতে। ইহার পর তুমি ঐ নক্ষত্ৰলোকপ্রতি চাহিয়া তথায় আসিবার জন্য কাতর হইবে। আমি আর একবার তোমাকে দেখা দিব যখন তুমি মনঃপীড়ায় ধূল্যবলুষ্ঠিত হইয়া, আমাকে মনে করিয়া, আমার কাছে আসিবার জন্য র্কাদিবে, তখন আমি আবার দেখা দিব, তখন আমার সঙ্গে আসিও। এখন • তুমি আমার অঙ্গুলিসঙ্কেতনীতনয়নে আকাশপ্রান্তে চাহিয়া দেখ। আমি তোমাকে দুইটি মনুষ্যমূৰ্ত্তি দেখাইতেছি। এই দুই মনুষ্ঠই ইহলোকে তোমার শুভাশুভের কারণ হইবে। যদি পার, তবে ইহাদিগকে দেখিলে বিষধরবৎ প্রত্যাখ্যান করিও। তাহারা যে পথে যাইবে, সে পথে যাইও না। তখন জ্যোতিৰ্ম্ময়ী, অঙ্গুলিসঙ্কেতদ্বারা গগনোপান্ত দেখাইলেন। কুন্দ তৎসক্ষেতানুসারে দেখিল, নীল গগনপটে এক দেবনিন্দিত পুরুষমূৰ্ত্তি অম্বিত হইয়াছে। র্তাহার উন্নত, প্রশস্ত, প্রশান্ত, ললাট ; সরল, সকরুণ কটাক্ষ; তাহার মরালবং দীর্ঘ ঈষৎ বঙ্কিম গ্রীব এবং অন্যান্য মহাপুরুষলক্ষণ দেখিয়া, কাহারও বিশ্বাস হইতে পারে না যে, ইহা হইতে, আশঙ্কা সম্ভবে। তখন ক্রমে ক্রমে সে প্রতিমূৰ্ত্তি জলবুদ্ধদ্রবংগগনপটে বিলীন . হইলে, জননী কুন্দকে কহিলেন, “ইহার দেবকাস্ত রূপ দেখিয়া ভুলিও না। ইনি মহাশয় হইলেও, তোমার অমঙ্গলের কারণ। অতএব বিষধরবোধে ইহাকে ত্যাগ করিও।” পরে আলোকময়ী পুনশ্চ “ঐ দেখ” বলিয়া গগনপ্রাস্তে নির্দেশ করিলে, কুন্দ দ্বিতীয় মূৰ্ত্তি আকাশের নীলপটে চিত্রিত দেখিল। কিন্তু এবার পুরুষমূৰ্ত্তি নহে। কুন্দ তথায় এক উজ্জল খামাঙ্গী, পদ্মপলাশনয়নী যুবতী দেখিল। তাহাকে দেখিয়াও কুন্দ ভীত হইল না । জননী কহিলেন, “এই শু্যামাঙ্গী নারীবেশে রাক্ষসী । ইহাকে দেখিলে পলায়ন করিও।” o ইহা বলিতে বলিতে সহসা আকাশ অন্ধকারময় হইল, বৃহচ্চন্দ্রমণ্ডল আকাশে অন্তৰ্হিত হইল, এবং তৎসহিত তন্মধ্যসংবৰ্ত্তিনী তেজোময়ীও অস্তুৰ্হিতা হইলেন। তখন কুন্দের নিদ্ৰাভঙ্গ হইল।