পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম পরিচ্ছেদ বাৰু হরিদাসী বৈষ্ণবী দত্তদিগের গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া দেবীপুরের দিকে গেল। দেবীপুরে বিচিত্র লৌহরেইলপরিবেষ্টিত এক পুষ্পোপ্তান আছে। তন্মধ্যে নানাবিধ ফল পুষ্পের বৃক্ষ, মধ্যে পুষ্করিণী, তাহার উপরে বৈঠকখানা। হরিদাসী সেই পুষ্পোপ্তানে প্রবেশ করিল। এবং বৈঠকখানায় প্রবেশ করিয়া এক নিভৃত কক্ষে গিয়া বেশ পরিত্যাগে প্রবৃত্ত হইল। অকস্মাৎ সেই নিবিড় কেশদামরচিত কবরী মস্তকচু্যত হইয়া পড়িল, সে ত পরচুলা মাত্র। বক্ষ হইতে স্তনযুগল খসিল—তাহ বস্ত্রনির্মিত। বৈষ্ণবী পিত্তলের বালা ও জলতরঙ্গ চুড়ি খুলিয়া ফেলিল—রসকলি ধুইল। তখন উপযুক্ত পরিচ্ছদ পরিধানানন্তর, বৈষ্ণবীর স্ত্রীবেশ ঘুচিয়, এক অপূৰ্ব্ব সুন্দর যুবাপুরুষ দাড়াইল। যুবার বয়স পঞ্চবিংশ বৎসর, কিন্তু ভাগ্যক্রমে মুখমণ্ডলে রোমাবলীর চিহ্নমাত্র ছিল না। মুখ এবং গঠন কিশোরবয়স্কের স্থায়। কাস্তি পরম মুন্দর। এই যুবপুরুষ দেবেন্দ্র বাবু। পূর্বেই . র্তাহার কিছু পরিচয় দেওয়া হইয়াছে। দেবেন্দ্র এবং নগেন্দ্র উভয়েই এক বংশসম্ভূত; কিন্তু বংশের উভয় শাখার মধ্যে পুরুষানুক্রমে বিবাদ চলিতেছে। এমন কি দেবীপুরের বাবুদিগের সঙ্গে গোবিন্দপুরের বাবুদিগের মুখের আলাপ পৰ্য্যন্ত ছিল না। পুরুষানুক্রমে দুই শাখায় মোকদ্দমা চলিতেছে। শেষে এক বড় মোকদ্দমায় নগেন্দ্রের পিতামহ দেবেন্দ্রের পিতামহকে পরাজিত করায় দেবীপুরের বাবুর একবারে হীনবল হইয়া পড়িলেন। ডিক্ৰীজারিতে র্তাহাদেৱ সৰ্ব্বস্ব গেল—গোবিন্দপুরের বাবুর র্তাহাদের তালুক সকল কিনিয়া লইলেন। সেই অবধি দেবীপুর হ্রস্বতেজ, গোবিন্দপুর বৰ্দ্ধিতন্ত্র হইতে লাগিল। উভয় বংশে আর কখনও মিল হইল না। দেবেন্দ্রের পিতা ক্ষুণ্ণধনগৌরব পুনর্বদ্ধিত করিবার জন্ত এক উপায় করিলেন। গণেশ বাবু নামে আর একজন জমিদার হরিপুর জেলার মধ্যে বাস করিতেন। র্তাহার একমাত্র অপত্য হৈমবর্তী। দেবেশ্রের সঙ্গে হৈমবতীর বিবাহ দিলেন। হৈমবতীর অনেক গুণ—সে কুরূপ, মুখর, অপ্রিয়বাদিনী, আত্মপরায়ণা। যখন দেবেশ্রের সহিত তাহার বিবাহ হইল, তখন পৰ্য্যন্ত দেবেজের চরিত্র নিষ্কলঙ্ক । লেখাপড়ায় তাহার বিশেষ যত্ন ছিল, এবং প্রকৃতিও মুখীর ও সভ্যনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু সেই পরিণয় তাহার কাল হইল । যখন দেবেন্দ্র উপযুক্ত বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেন, তখন দেখিলেন যে, ভাৰ্য্যার গুণে গৃহে তাহার