পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ ঃ ধরা পড়িল 86. কুন্দ বলিল, “কি ?” কমল বলিলেন, “যা জিজ্ঞাসা করিব ? আমি তোর দিদি—আমার কাছে লুকুস নে— আমি কাহারও কাছে বলিব না।” কমল মনে মনে রাখিলেন, “যদি বলি ত রাজমন্ত্রী শ্রীশ বাবুকে । আর খোকার কাণে কাণে ” । কুন্দ বলিলেন, “কি বল ?” ক । তুই দাদাবাবুকে বড় ভালবাসিস্ —না ? কুন্দ উত্তর দিল না। কমলমণির হৃদয়মধ্যে মুখ লুকাইয়া কাদিতে লাগিল । কমল বলিলেন, “বুঝিছি—মরিয়াছ। মর তাতে ক্ষতি নাই—কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মরে যে ?” কুন্দনন্দিনী মস্তক উত্তোলন করিয়া কমলের মুখপ্রতি স্থিরদৃষ্টি করিয়া রহিল। কমলমণি প্রশ্ন বুঝিলেন। বলিলেন, “পোড়ারমুখী চোখের মাথা খেয়েছ ? দেখিতে পাও না যে—“ মুখের কথা মুখে রহিল—তখন ঘুরিয়া কুন্দের উন্নত মস্তক আবার কমলমণির বক্ষের উপর পড়িল। কুন্দনন্দিনীর অশ্রুজলে কমলমণির হৃদয় প্লাবিত হইল। কুন্দনন্দিনী অনেকক্ষণ নীরবে কাদিল-বালিকার স্থায় বিবশী হইয়া কাদিল । সে কাদিল, আবার পরের চক্ষের জলে তাহার চুল ভিজিয়া গেল । ভালবাসা কাহাকে বলে, সোণার কমল তাহা জানিত । অন্তঃকরণের অন্তঃকরণ মধ্যে কুন্দনন্দিনীর দুঃখে দুঃখী, সুখে সুখী হইল। কুন্দনন্দিনীর চক্ষু মুছাইয়া কহিল, “कून्ल !” কুন্দ আবার মাথা তুলিয়া চাহিল। so কম । আমার সঙ্গে চল । কুন্দের চক্ষে আবার জল পড়িতে লাগিল। কমল বলিল, “নহিলে নয়।—সোণার সংসার ছারখার গেল।” কুন্দ কঁাদিতে লাগিল । কমল বলিলেন, “যাবি ? মনে করিয়া দেখ ?—” কুন্দ অনেক ক্ষণ পরে চক্ষু মুছিয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, “যাব।” অনেকক্ষণ পরে কেন ? তাহা কমল বুঝিল । বুঝিল যে, কুন্দনন্দিনী পরের মঙ্গলমন্দিরে আপনার প্রাণের প্রাণ বলি দিল। নগেন্দ্রের মঙ্গলার্থ, সূৰ্য্যমুখীর মঙ্গলার্থ, নগেন্দ্রকে ভুলিতে স্বীকৃত হইল। সেই জন্য অনেক ক্ষণ লাগিল। আপনার মঙ্গল ? কমল বুঝিয়াছিলেন যে, কুন্দনন্দিনী আপনার মঙ্গল বুঝিতে পারে না।