পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ : হীরা 84 রহিল। হরিদাসী তখন আর গান করিল না। এদিক্ সেদিক্‌ বাজে কথা আরম্ভ করিল। গান আর হইল না দেখিয়া আর সকলে উঠিয়া গেল। কুন্দ কেবল উঠিল না—চরণে তাহার গতিশক্তি ছিল কি না সন্দেহ। তখন কুন্দকে বিরলে পাইয়া হরিদাসী তাহাকে অনেক কথা বলিল। কুন্দ কতক বা শুনিল, কতক বা শুনিল না। । সূৰ্য্যমুখী ইহা সকলই দূর হইতে দেখিতেছিলেন। যখন উভয়ে গাঢ় মনঃসংযোগের সহিত কথাবাৰ্ত্ত হওয়ার চিহ্ন দেখিলেন, তখন সূৰ্য্যমুখী কমলকে ডাকিয় দেখাইলেন । কমল বলিল, “কি তা ? কথা কহিতেছে কহুক না। মেয়ে বই ত আর পুরুষ না।” সূৰ্য্য। মেয়ে কি পুরুষ তার ঠিক কি ? কমল বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “সে কি ?” সূৰ্য্য। আমার বোধ হয় কোন ছদ্মবেশী পুরুষ। তাহ এখনই জানিব-কিন্তু কুন্দ কি পাপিষ্ঠ। “রসো । আমি একটা বাবলার ডাল আনি । মিন্সেকে র্কাট ফোটার মুখটে। দেখাই ।” এই বলিয়া কমল বাবলার ডালের সন্ধানে গেলেন। পথে সতীশের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল—সতীশ মামীর সিন্দুরকেটা অধিকার করিয়া বসিয়া ছিলেন—এবং সিন্দুর লইয়া আপনার গালে, নাকে, দাড়িতে, বুকে, পেটে বিলক্ষণ করিয়া অঙ্গরাগ করিতেছিলেন —দেখিয়া কমল, বৈষ্ণবী, বাবলার ডাল, কুন্দনন্দিনী প্রভৃতি সব ভুলিয়া গেলেন। তখন সূৰ্য্যমুখী হীরা দাসীকে ডাকাইলেন । হীরার নাম একবার উল্লেখ হইয়াছে। তাহার কিছু বিশেষ পরিচয় আবশ্যক। নগেন্দ্র এবং তাহার পিতার বিশেষ যত্ব ছিল যে, গৃহের পরিচারিকার বিশেষ সৎস্বভাববিশিষ্ট হয়। এই অভিপ্রায়ে উভয়েই পৰ্য্যাপ্ত বেতনদান স্বীকার করিয়া, একটু ভদ্রঘরের স্ত্রীলোকগণকে দাসীত্বে নিযুক্ত করিতে চেষ্টা পাইতেন। র্তাহাদিগের গৃহে পরিচারিকা মুখে ও সম্মানে থাকিত, সুতরাং অনেক দারিদ্র্যগ্রস্ত ভদ্রলোকের কন্যার র্তাহাদের দাসবৃত্তি স্বীকার করিত। এই প্রকার যাহারা ছিল, তাহাদের মধ্যে হীরা প্রধান । অনেকগুলি পরিচারিক কায়স্থকন্ত—হীরাও কায়স্থ। নগেন্দ্রের পিতা হীরার মাতামহীকে গ্রামান্তর হইতে আনয়ন করেন। প্রথমে তাহার মাতামহীই পরিচর্য্যায় নিযুক্ত হইয়াছিল—হীরা তখন বালিকা, মাতামহীর সঙ্গে আসিয়াছিল। পরে হীরা সমর্থী হইলে প্রাচীন দাসীবৃত্তি ত্যাগ করিয়া আপন সঞ্চিত ধনে একটি সামান্ত গৃহ নিৰ্ম্মাণ করিয়া গোবিন্দপুরে বাস করিল—হীরা দত্তগুহে চাকরি করিতে প্রবৃত্ত হইল।