পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৮৪

থাকিবে, কিন্তু তোমার ভ্রমও অনেক। স্ত্রীজাতির এমনই একটি মোহিনী শক্তি আছে যে, পুরুষের মন অতি কঠিন হইলেও সহজে নোয়াইতে পারে, ঘুরাইতে পারে, ফিরাইতে পারে। তবে অন্যের প্রণয়ে মজিলে একটু কথা আছে বটে। কিন্তু হাতে পাইয়া নির্জ্জনে বসাইতে পারিলে, কাছে ঘেঁসিয়া মোহিনী মন্ত্রগুলি ক্রমে ক্রমে আওড়াইতে পারিলে, অবশ্য কিছু কিছু ফল ফলাইতে পারিবেই পারিবে। এ যে না পারে সে নারী নহে;— আর আমি তাঁহাকে বিষপান করাইব, এ কথা ত তিনি জানেন না, কেহ ত তাঁহাকে সে কথা বলে নাই; তিনিও ত সর্ব্বজ্ঞ নহেন যে, জয়নাবের ঘরে বসিয়া জাএদার মনের খবর জানিতে পারিবেন? যে পথে দাঁড়াইয়াছি—আর ফিরিব না, যাহা করিতে হয় আমিই করিব।”

 মায়মুনা মনে মনে সন্তুষ্ট হইয়া মনে মনেই বলিল, “মানুষের মনের ভাব পরিবর্ত্তন হইতে ক্ষণকাল বিলম্ব হয় না!”—প্রকাশ্যে কহিল, “আমি খেজুর লইয়া শীঘ্রই আসিতেছি।”

 মায়মুনা বিদায় লইল। জাএদা অবশিষ্ট মধু, যাহা পাত্রে ছিল তাহা অনিয়া, দেখিয়া দেখিয়া মনে মনে বলিতে লাগিলেন: “যেমন মধু তেমনি আছে, ইহার চারিভাগের এক ভাগও যদি উদরস্থ হইত, তবে আজ এতক্ষণ জয়নাবের সুখতরী ডুবিয়া যাইত, সুখের বাসা ভাঙ্গিয়া একেবারে দুঃখের সাগরে ডুবিত, স্বামীসোহাগিনীর সাধ মিটিয়া যাইত! এই সুমধুর মধুতেই জাএদার আশা পরিপূর্ণ হইত। প্রথমে যে ভাব হইয়াছিল; আর কিছুক্ষণ সেই ভাব থাকিলে আজ জয়নাবের আর হাসিমুখ দেখিতাম না; আমারও অন্তর জ্বলিত না। দুইবার তিনবার,— -যতবার হয় চেষ্টা করিব; চেষ্টার অসাধ্য কি আছে!”

 মায়মুনা খেজুর লইয়া উপস্থিত হইল; বলিল, “সাবধান! আর আমি বিলম্ব করিব না; যদি আবশ্যক হয়, সময় বুঝিয়া আমার বাটীতে যাইও।” এই কথা বলিয়া মায়মুনা চলিয়া গেল। জাএদা সেই খেজুরগুলি রাছিয়া দুই ভাগ করিলেন। এক ভাগের প্রত্যেক খেজুরে এমন একটি চিহ্ন দিলেন যে, তিনি ভিন্ন অন্য কাহারও চক্ষে তাহা পড়িবার