পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৮৬

বিষের কার্য্য আরম্ভ হইল। হাসান সন্দেহ প্রযুক্ত আর খাইলেন না, কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই অস্থির হইয়া পড়িলেন। তিনি আর বিলম্ব করিলেন না, কোন কথাও কহিলেন না; নিতান্ত দুঃখিতভাবে প্রাণের অনুজ হোসেনের গৃহাভিমুখে গমন করিলেন। এবারও কাহাকেও কিছু বলিলেন না। কিছুক্ষণ ভ্রাতৃগৃহে অবস্থিতি করিলেন। নিদারুণ বিষের যন্ত্রণা ক্রমশঃ অসহ্য হইয়া উঠিল। পুনরায় তিনি প্রভু মোহাম্মদের ‘রওজা মোবারকে’ (পবিত্র সমাধিক্ষেত্রে) যাইয়া ঈশ্বরের নিকট আরোগ্য প্রার্থনা করিতে লাগিলেন। দয়াময় এবারেও হাসানকে আরোগ্য দান করিয়া তাঁহার প্রাণ রক্ষা করিলেন।

 জাএদার আচরণ এবার হাসান কিছু কিছু বুঝিতে পারিয়াছিলেন। তথাপি তিনি সে কথা মুখে আনিলেন না; কাহারও নিকট প্রকাশও করিলেন না; কিন্তু মনে মনে বড়ই দুঃখিত হইলেন। তিনি নির্জ্জনে বসিয়া মনে মনে বলিতে লাগিলেন, “স্ত্রী দুঃখের ভাগিনী, সুখের ভাগিনী। আর আমার স্ত্রী যাহা—ঈশ্বরই জানেন! আমি জ্ঞানপূর্ব্বক জাএদার কোন অনিষ্ট করি নাই, কোন প্রকার কষ্টও তাহাকে দিই নাই। জয়নাবকে বিবাহ করিয়াছি বলিয়াই কি জাএদা আমার প্রাণ লইতে সঙ্কল্প করিয়াছে? স্বহস্তে পতিবধে প্রবৃত্ত হইয়াছে? সপত্নী-সম্বন্ধ তাহার নূতন নহে। হাস্‌নেবানুও তাহার সপত্নী। যে জাএদা আমার জন্য সর্ব্বদা মহাব্যস্ত থাকিত—কিসে আমি সন্তুষ্ট থাকিব, তাহারই অনুসন্ধান করিত, আজ সেই জাএদা আমার প্রাণবিনাশের জন্য বিষ হস্তে করিয়াছে! না, না—এ কথা আর কাহাকেও বলিব না। এ বাটীতেও আর থাকিব না। মায়াময় সংসার ঘৃণার্হ স্থান। নিশ্চয় জাএদার মন অন্য কোন লোভে আক্রান্ত হইয়াছে। অবশ্যই জাএদা কোন আশায় ভুলিয়াছে, কুহকে মজিয়াছে। সপত্নীবাদে সে আমাকে বিষ দিবে কেন? এ বিষ ত জয়নাবকে দেওয়াই সম্ভব। জয়নাবের প্রাণেই তাহার অনাদর হইতে পারে, আমার প্রাণে অনাদর হইলে তাহার আর সুখ কি? স্ত্রী হইয়া যখন স্বামী-বধে অগ্রসর হইয়াছে, তখন আর আমার নিস্তার নাই! এ পুরীতে আর থাকিব না।