পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চদশ প্রবাহ

ম্মদের বংশমধ্যে যাহাকে সে হাতে পাইবে, তাহারই প্রাণ সংহার করিবে। মদিনা পরিত্যাগ করিয়া হাসানের মুসাল নগরে আগমন বৃত্তান্ত শুনিয়া সেই ব্যক্তি বিশেষ যত্নে হলাহলসংযুক্ত এক সুতীক্ষ্ণ বর্ষা প্রস্তুত করিয়া শত্রুতা সাধনোদ্দেশ্যে মুসাল নগরে যাত্রা করিল। কয়েকদিন অবিশ্রান্তে পথ চলিবার পর মুসাল নগরে যাইয়া সে সন্ধানে জানিল যে, এমাম হাসান ঐ নগরস্থ উপাসনা-মন্দিরে অবস্থান করিতেছেন এবং ঐ স্থানে অব্বাস প্রভৃতি কয়েকজন বন্ধু তাঁহার সমভিব্যাহারে রহিয়াছেন। বৃদ্ধ উল্লিখিত উপাসনা-মন্দিরের সীমাবর্ত্তী গুপ্তস্থানে বর্শা লুকাইয়া রাখিয়া একেবারে হাসানের নিকটস্থ হইল। এমাম হাসানের দৃষ্টি তাহার দিকে পড়িবামাত্র ধূর্ত্ত বৃদ্ধ তাঁহার পদতলে পতিত হইয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিতে লাগিল, “প্রভো! আমাকে রক্ষা করুন। আমি এতদিন শয়তানের কুহকে পড়িয়া পবিত্র মোহাম্মদীয় ধর্ম্মের প্রতি অবিশ্বাস করিয়াছি। এক্ষণে ঈশ্বর-কৃপায় আমার জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হইয়াছে। সত্যধর্ম্মের জ্যোতিঃপ্রভাবে মনের অন্ধকার দূর হইয়াছে। স্বপ্ন দেখিয়াছি যে, এমাম হাসান মদিনা হইতে মুসাল নগরে আসিয়াছেন। সেই স্বপ্নেই কে যেন আমায় বলিল যে, শীঘ্র এমাম হাসানের নিকট যাইয়া সত্যধর্ম্মে দীক্ষিত হও, পূর্ব্ব পাপ স্বীকার করিয়া মার্জ্জনার জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা কর, ভবিষ্যৎ পাপ হইতে বিরত থাকিবার জন্য ধর্ম্মতঃ প্রতিজ্ঞা কর। এই মহার্থপূর্ণ স্বপ্ন দেখিয়া আমি ঐ ঐপাদপদ্মে আত্মসমর্পণ করিতে আসিয়াছি, যাহা অভিমত হয় আজ্ঞা করুন।”

 দয়ার্দ্র চিত্ত হাসান আগন্তুক বৃদ্ধকে অনেক আশ্বাস দিয়া বলিলেন, “আমি তোমাকে মোহাম্মদীয় ধর্ম্মে দীক্ষিত করিতে এখনই প্রস্তুত আছি।” এই কথা বলিয়াই এমাম হাসান তৎক্ষণাৎ তাহার হস্ত স্পর্শ করিয়া তাহাকে “বায়েত” {মুসলমানধর্ম্মে দীক্ষিত) করিলেন। বৃদ্ধও যথারীতি মোহাম্মদীয় ধর্ম্মে “ঈমান” (মুখে স্বীকার এবং বিশ্বাস) আনিয়া হাসানের পদধুলি গ্রহণ করিল। বিধর্ম্মীকে সৎপথে আনিলে মহাপুণ্যবৃদ্ধও এই প্রাচীন বয়সে আত্মীয় স্বজন, স্ত্রী-পুত্র সকলকে পরিত্যাগ করিয়া মুসলমান ধর্ম্ম গ্রহণ করাতে মাননীয় হাসানের বিশেষ অনুগৃহীত ও বিশ্বাসভাজন হইল।