পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৯০

 দুষ্টবুদ্ধি, স্বার্থপর, নরপিশাচ কেবল কার্য্য উদ্ধারের নিমিত্তই, চিরমনোরথ পরিপূর্ণ করিবার আশাতেই—চিরবৈরনির্য্যাতন মানসেই অকপটভাবে হাসানের শরণাগত হইল; ইহা সরলস্বভাব হাসানের বুদ্ধির অগোচর। বৃদ্ধ প্রকাশ্যে ভক্তিশ্রদ্ধা করিতে লাগিল বটে, কিন্তু চিরাভিলাষ পূর্ণ করিবার অবসর ও সুযোগ অন্বেষণে সর্ব্বদাই সমুৎসুক রহিল। আগন্তুককে বিশ্বাস করিতে নাই, এ কথা যে হাসান না জানিতেন, তাহা নহে; কিন্তু সেই মহাশক্তি—সেই সুকৌশলসম্পন্ন ঈশ্বরের লীলা সম্পন্ন হইবার জন্যই অনেক সময়ে অনেক লোকে অনেক জানিয়াও সব ভুলিয়া যায়, অনেক চিনিয়াও কিছুই চেনে না!

 উপাসনা-মন্দিরের সম্মুখে হাসান এবং এব্‌নে আব্বাস বসিয়া আছেন। নূতন শিষ্য কার্য্যান্তরে গিয়াছে। এবনে আব্বাস বলিলেন, “এই যে দামেস্ক হইতে আগত একচক্ষু-বিহীন পাপস্বীকারকারী বৃদ্ধ—আপনার বিশ্বাসভাজন নব শিষ্য, ইহার প্রতি আমার সন্দেহ হয়।”

 “কি সন্দেহ?”

 “আমি চিন্তা করিয়াছি,—অনেক ভাবিয়াও দেখিয়াছি, এই বৃদ্ধ শুদ্ধমাত্র ধর্ম্মে দীক্ষিত হইতে আসে নাই। আমার বোধ হয়, দুরভিসন্ধি সাধন মানসে কিংবা কোন গুপ্ত সন্ধান লইবার জন্য আমাদের অনুসন্ধানে আসিয়াছে।”

 “অসম্ভব! তাহা হইলে ভক্তিভাবে মোহাম্মদীয় ধর্মে দীক্ষিত হইবে কেন? সাধারণ ভাবে এখানে অনায়াসেই থাকিতে পারিত, সন্ধানও লইতে পারিত।”

 “পারিত সত্য—পারিয়াছেও তা”;—কিন্তু বিধর্ম্মী, নারকী, দুষ্ট খল শত্রু কেবল কার্য্য উদ্ধারের জন্য ধর্ম্মের ভাণ করিয়া গুরু-শিষ্য-সম্বন্ধ স্থাপন করিতে আসিয়াছে, ইহাতে আশ্চর্য্য বা কি?”

 ও কোন কথাই নয়। তিন কাল কাটিয়া শেষে কি এই বৃদ্ধকালে সে বাহ্যিক ধর্ম্মপরিচ্ছদে কপটবেশে পাপকার্য্যে লিপ্ত হইবে? জগৎ কি চিরস্থায়ী? শেষের দিনের ভাবনা, বল ত কার না আছে? এই বৃদ্ধ